বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই দূষিত বাতাস গ্রহণ করছে, এমন একটি উদ্বেজনক তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের (IQAir) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মাত্র সাতটি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ু মানের আদর্শ বজায় রাখতে পেরেছে।
১৩৮টি দেশের ৪০,০০০ বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চাদ, এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও কঙ্গো।
প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোজ, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ড বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বায়ু মানের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে অনেক দেশে পর্যাপ্ত বায়ুমান পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দূষণের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি ৩৭ লক্ষ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলোতে বায়ুমান বিষয়ক তথ্য প্রকাশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তথ্য-উপাত্তের এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের বায়ু দূষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রায়শই দূতাবাসগুলোতে স্থাপিত সেন্সরগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাজেট ঘাটতির কারণ দেখিয়ে এই কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে।
আইকিউএয়ারের বায়ুমান বিষয়ক বিজ্ঞান ব্যবস্থাপক ক্রিস্টি চেস্টার-শ্রোয়েডার জানান, “বেশিরভাগ দেশের হয়তো কিছু বিকল্প ডেটা উৎস আছে, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আফ্রিকার দেশগুলোতে।
কারণ অনেক সময় এটিই থাকে জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ একমাত্র রিয়েল-টাইম বায়ুমান পর্যবেক্ষণের ডেটা।”
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (EPIC) পরিচালক ক্রিস্টা হাসেনকফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে অন্তত ৩৪টি দেশ নির্ভরযোগ্য দূষণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে।
হাসেনকফের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রকল্পের কারণে দূতাবাসগুলোতে বায়ুমান উন্নত হয়েছে, যা সেখানকার কর্মীদের গড় আয়ু বাড়িয়েছে এবং তাদের ঝুঁকি ভাতা কমাতেও সাহায্য করেছে।
এমনকি, এর ফলে প্রকল্পের খরচও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের কারণে দেশটির সরকারি বায়ুমান পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট airnow.gov থেকে গত ১৭ বছরের বেশি সময়ের ডেটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে চাদের বায়ুমান বিষয়ক তথ্যও ছিল।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চাদ এবং বাংলাদেশের গড় বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশনার চেয়ে ১৫ গুণেরও বেশি ছিল।
সাহারা মরুভূমির ধুলো এবং অপরিকল্পিতভাবে ফসল পোড়ানোর কারণে ২০২২ সালে চাদকে সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ক্রিস্টি চেস্টার-শ্রোয়েডার সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বায়ু দূষণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে, যা বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা