অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তির শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা কৃত্রিম হৃদযন্ত্র (Artificial Heart) ১০০ দিন ধরে সফলভাবে কাজ করেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞান এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আশা জাগিয়েছে।
সম্প্রতি, ৪০-এর কোঠার ওই ব্যক্তি, যিনি পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন, গত নভেম্বরে সিডনির সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই অত্যাধুনিক যন্ত্রটি স্থাপন করেন।
বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ব্যক্তি এত দীর্ঘ সময় ধরে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেন। ফেব্রুয়ারিতে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং একটি হৃদযন্ত্র পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে, চলতি মাসের শুরুতে তাঁর দেহে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
চিকিৎসকদের মতে, এই সাফল্যের ফলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া রোগীদের জন্য কৃত্রিম হৃদযন্ত্র দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে। এই যন্ত্রটি তৈরি করেছে একটি মার্কিন-অস্ট্রেলীয় কোম্পানি, যার নাম BiVACOR। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠা একটি বিরাট ঘটনা।
এই কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের উদ্ভাবক হলেন অস্ট্রেলীয় বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার ড্যানিয়েল টিমস (Daniel Timms)। তাঁর বাবার হৃদরোগে মৃত্যুর পর তিনি এই যন্ত্র তৈরি করতে উৎসাহিত হন। তিনি বলেন, “দশকের পর দশক ধরে চলা কঠোর পরিশ্রমের ফল দেখতে পাওয়াটা আনন্দদায়ক।”
বায়োভ্যাকোর (BiVACOR) কৃত্রিম হৃদযন্ত্রে (Total Artificial Heart – TAH) একটি মাত্র চলমান অংশ রয়েছে, যা চুম্বকের সাহায্যে স্থাপিত হয়। যন্ত্রটি টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি এবং এতে কোনো ভালভ বা যান্ত্রিক বেয়ারিং নেই, যা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি শরীরের ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ করে এবং হৃদযন্ত্রের দুটি অংশের (ভেন্ট্রিকল) কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগ বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এই রোগে মারা যায়। অনেক রোগীই উপযুক্ত হৃদযন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৩,৫০০ জনের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়, যেখানে প্রায় ৪,৪০০ জন এই প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমান থাকেন।
ভিক্টর চ্যাং কার্ডিয়াক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ক্রিস হেইওয়ার্ড (Chris Hayward) বলেন, বায়োভ্যাকোরের কৃত্রিম হৃদযন্ত্র হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাঁর মতে, আগামী এক দশকের মধ্যে এই প্রযুক্তি রোগীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠবে, বিশেষ করে যখন দাতা হৃদযন্ত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রেও এই যন্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সেখানে পাঁচজন রোগীর শরীরে এটি সফলভাবে স্থাপন করা হয়। এর আগে, গত জুলাই মাসে টেক্সাস মেডিকেল সেন্টারে এক জন রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছিল, যা আট দিন পর্যন্ত তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় এই সাফল্যের পর, মোনাশ ইউনিভার্সিটির ‘আর্টিফিশিয়াল হার্ট ফ্রন্টিয়ার্স প্রোগ্রাম’-এর অধীনে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য আরও তিনটি যন্ত্র তৈরি ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যার জন্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন