যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহরে অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জেরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্লোরিডার মিয়ামি বিচ-এর মেয়র একটি সিনেমা হলকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন, কারণ তারা সম্প্রতি সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পাওয়া ‘নো আদার ল্যান্ড’ ছবিটি প্রদর্শন করেছে।
মেয়র স্টিভেন মেইনার সিনেমা হলটির ভাড়া বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং হলটিকে দেওয়া ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদানও প্রত্যাহার করতে চাইছেন।
মেয়র তাঁর বক্তব্যে ছবিটিকে “ইহুদিদের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচার” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এই ছবি শহরের বাসিন্দাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
জানা গেছে, এর আগে মেয়র ও সিনেমা হলটিকে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলেছিলেন।
ইসরায়েলি এবং জার্মান কর্মকর্তাদের আপত্তির কথা উল্লেখ করে তিনি এমনটা করেছিলেন।
ও সিনেমা হলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিভিয়ান মারথেল প্রথমে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করতে রাজি হয়েছিলেন, কারণ হিসেবে তিনি “জাতিবিদ্বেষী বক্তব্যের” উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু মেয়রের দাবি, মারথেল পরে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
এরপর ছবিটির প্রদর্শনী হয় এবং তা দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।
এমনকি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ ছবিটির অতিরিক্ত প্রদর্শনীও যোগ করে, যা মার্চের জন্য নির্ধারিত ছিল।
অন্যদিকে, “নো আদার ল্যান্ড” তথ্যচিত্রটি ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি এবং এক ফিলিস্তিনি কর্মী ও এক ইসরায়েলি সাংবাদিকের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ছবিটির নির্মাতারা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে বলেছেন যে, এটি শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে এই ঘটনা মুক্তভাবে মত প্রকাশের অধিকার এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ গত বছর কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনি সংহতি আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ও গ্রিন কার্ডধারী এক প্রাক্তন কলম্বিয়া ছাত্রীকে আটক করেছে।
এই পরিস্থিতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কোনো প্রমাণ ছাড়াই, ওই ছাত্রীর “সন্ত্রাসী”, “ইহুদিবিদ্বেষী” এবং “মার্কিনবিরোধী” কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি, তবে তিনি “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি”।
গ্যালুপের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, মিয়ামি বিচ-এর কমিশনার ক্রিস্টেন রোজেন গনজালেজ, মেয়রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, এই ধরনের হঠকারী পদক্ষেপের কারণে “খরচসাপেক্ষ আইনি লড়াই” শুরু হতে পারে।
একইসঙ্গে তিনি ও সিনেমা হলের “ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার”-এর বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
ফ্লোরিডার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) মেয়রের এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছে।
তাদের মতে, “সরকার কোনো বিতর্কিত বিষয়সহ জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মতামত বেছে নিতে পারে না।”
উল্লেখ্য, এর আগেও মিয়ামি বিচ শহরে শিল্পকর্ম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
২০১৯ সালে, শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক রেমন্ড হেরিছের একটি প্রতিকৃতি শহরের একটি আর্ট প্রজেক্ট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
মেয়রের প্রস্তাবটি আগামী বুধবার কমিশনের ভোটে উত্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান