মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে এসেছে, তবে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারী মাসে দেশটির উৎপাদনকারী মূল্য সূচক (Producer Price Index – PPI) জানুয়ারীর তুলনায় অপরিবর্তিত ছিল। এর আগের মাসে এই সূচক ০.৬ শতাংশ বেড়েছিল।
ফেব্রুয়ারী মাসের এই পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, এক বছর আগের তুলনায় পাইকারি দাম বেড়েছে ৩.২ শতাংশ। যেখানে জানুয়ারী মাসে এই হার ছিল ৩.৭ শতাংশ।
খাদ্য ও জ্বালানি বাদে, মূল পাইকারি দাম (Core wholesale prices) জানুয়ারী মাস থেকে ০.১ শতাংশ কমেছে, যা জুলাই মাসের পর প্রথম পতন। যদিও জানুয়ারীতে এই সূচক ছিল ৩.৮ শতাংশ, যা এক বছর আগের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিসংখ্যানগুলো তাদের প্রত্যাশার চেয়ে কম। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র করেছেন, যা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে পারে।
তিনি বিদেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এছাড়াও, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তিনি।
এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) পক্ষ থেকে মার্কিন হুইস্কির ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে, তিনি ইউরোপীয় মদ, শ্যাম্পেন এবং স্পিরিটের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ভোক্তারা খরচ কমানোর পরিকল্পনা করছেন বলে বিভিন্ন বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা সতর্ক করেছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, জানুয়ারী মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারী মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে।
এক বছর আগের তুলনায় ভোক্তা মূল্য সূচক (Consumer Price Index – CPI) ২.৮ শতাংশ বেড়েছে, যা জানুয়ারীতে ছিল ৩ শতাংশ।
মূল ভোক্তা মূল্য (Core consumer prices) বেড়েছে ৩.১ শতাংশ, যা এপ্রিল ২০২১ এর পর সর্বনিম্ন।
ফেব্রুয়ারী মাসে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাসের দাম ৪.৭ শতাংশ কমেছে। তবে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১.৭ শতাংশ।
ডিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
ফেডারেল রিজার্ভ (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সুদের হার অপরিবর্তিত রাখতে পারেন।
অর্থনীতিবিদ কার্ল ওয়েইনবার্গ ও মেরি চেন এক মন্তব্যে বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ এখন খাদ্যপণ্যের দামের ওপর শুল্কের প্রভাবের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইকারি দামের এই চিত্র ভবিষ্যতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির গতিপথ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।
কারণ স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থিক পরিষেবার মতো কিছু উপাদান ফেডারেল রিজার্ভের মূল্যস্ফীতি পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যেমন – ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় সূচকে (Personal Consumption Expenditures – PCE) অন্তর্ভুক্ত।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের থমাস রায়ান উল্লেখ করেছেন, ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালের খরচ এবং আন্তর্জাতিক বিমানের টিকিটের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব বাজারের পরিবর্তনের ফলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস