নারীর প্রতি সহিংসতা: যুক্তরাজ্যের একটি প্রামাণ্যচিত্রে বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে নারীদের প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র। ‘স্ট্যাসি ডুলি: রেপ অন ট্রায়াল’ (Stacey Dooley: Rape on Trial) নামের এই তথ্যচিত্রে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, ভুক্তভোগীদের মানসিক যন্ত্রণা এবং প্রমাণ উপস্থাপনের জটিলতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিবিসির (BBC) এই প্রামাণ্যচিত্রটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী নারীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রামাণ্যচিত্রে তিনজন নারীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যাদের ধর্ষণ মামলার বিচার পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। জেসির (ছদ্ম নাম) ক্ষেত্রে, ঘটনার চার বছর পর রায় আসে। এই সময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পায় এবং ভুক্তভোগীর কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করতে থাকে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থার অবনতি হয়। একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে এমা ও বেক্কার। এমা জানান, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
এই প্রামাণ্যচিত্রে নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল উপস্থাপনার পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। আইনজীবীরা মনে করেন, ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন। কারণ, এখানে মৌখিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের জন্য দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া, ভুক্তভোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
বাংলাদেশেও নারী নির্যাতন একটি গুরুতর সমস্যা। এখানেও ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (BNWLA), অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (ASF)। এছাড়াও, সরকারিভাবেও ভুক্তভোগীদের জন্য সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এই প্রামাণ্যচিত্রটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই একটি চলমান প্রক্রিয়া। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান