বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় পাই-এর স্বাদ
মিষ্টি হোক বা নোনতা, মুখরোচক খাবার হিসেবে পাই-এর জুড়ি মেলা ভার। সারা বিশ্বেই খাদ্যরসিকদের কাছে এটি একটি প্রিয় খাবার। ১৪ই মার্চ তারিখে গণিত ধ্রুবক পাই (π)-এর প্রথম তিনটি সংখ্যা ৩.১৪১৫… এর সম্মানে পালিত হয় পাই দিবস। আর এই দিবসটি যেন সারা বিশ্বের নানা ধরনের পাই নিয়ে আলোচনার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
আমাদের দেশে যেমন সিঙ্গারা, পুরি, কিংবা নানান ধরনের পিঠার চল আছে, তেমনই সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের পাই-এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আসুন, আজ আমরা বিশ্বজুড়ে প্রচলিত কিছু দারুণ পাই-এর গল্প শুনি।
মাংসের পাই
প্রাচীনকালে, মাংস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ময়দার আস্তরণে মাংস রাখা হতো, যা সময়ের সাথে সাথে খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এই রুটির সাথে মাংস খাওয়ার চল বাড়ে, যা আজকের মাংসের পাই-এর ধারণার জন্ম দেয়।
ব্রিটিশ ও তাদের উপনিবেশগুলোতে মাংসের পাই-এর কদর বেশ উল্লেখযোগ্য। ‘স্টেক অ্যান্ড অ্যালে পাই’ তাদের পাব-এর একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি মধ্যযুগীয় পাই থেকে এসেছে, যেখানে স্থানীয় মাংস, সবজি এবং মশলার ব্যবহার করা হতো। কানাডার ‘টুর্তিয়ের’ একটি মাংসের পাই, যা ঐতিহ্যগতভাবে শুকরের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ক্রিসমাসে পরিবেশন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ছোট আকারের মাংসের পাই-এর প্রচলন আছে, যেখানে গরুর মাংস ও গ্রেভি (মাংসের ঝোল) প্রধান উপাদান। এই পাইগুলোতে প্রায়ই টমেটো সস বা কেচাপ দেওয়া হয়।
এছাড়াও, ‘কর্নিশ পাস্ট্রি’ নামের হাতে ধরা যায় এমন একটি মাংসের পাই বেশ জনপ্রিয়। এটি মূলত খনি শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এটি সবার কাছেই প্রিয়। জামাইকান বিফ প্যাটি ও নাইজেরিয়ান মাংসের পাই-ও বেশ পরিচিত, তবে জামাইকান প্যাটির সোনালী, হলুদ রঙের আস্তরণ এবং মশলার জন্য এটি আলাদা পরিচিতি লাভ করেছে।
নোনতা স্বাদের অন্যান্য পাই
গ্রিক রন্ধনশৈলীতেও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও নোনতা পাই পাওয়া যায়। ‘স্পানাকোপিটা’ পালংশাক এবং ফেটা চিজ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা পাতলা ময়দার স্তরে মোড়ানো থাকে। এছাড়াও, ‘হোরতোপিটা’ বুনো শাক দিয়ে, ‘তিরোপিটা’ পনির দিয়ে এবং ‘মারিদোপিটা’ মাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। আলবেনীয় ‘বুরেক’ বা ‘বইরেক’-ও বেশ পরিচিত, যা মাংস, পালংশাক ও পনির দিয়ে তৈরি করা হয়। টমেটো ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি সংস্করণটি ‘আলবেনীয় পিৎজা’ নামে পরিচিত।
মিষ্টি ও নোনতা স্বাদের মিশ্রণ
ঐতিহাসিকভাবে, মাংসের পাই-এর ইতিহাসে মশলার ব্যবহার মিষ্টি ও নোনতা স্বাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। মরক্কোর ‘পাস্তিলা’ বা ‘বিস্টিয়া’ একটি মশলাদার পাই, যেখানে মুরগি, বাদাম এবং ডিম ব্যবহার করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে পায়রা বা বাবুই পাখি ব্যবহার করা হলেও, আধুনিককালে এর বদলে মুরগি ব্যবহার করা হয়।
ফলের পাই
বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে তৈরি পাই-ও বেশ জনপ্রিয়। আপেল, চেরি বা অন্যান্য ফল ব্যবহার করে দারুণ সব পাই তৈরি করা হয়। উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যাওয়া কিছু ফলের পাই ইউরোপ থেকে আসা অভিবাসীরা নিয়ে এসেছিলেন, আবার কিছু স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাবার্ব (এক ধরনের সবজি) দিয়ে তৈরি পাই উনিশ শতকের শুরুতে নিউ ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তা লাভ করে। কন্সর্ট আঙ্গুরের পাই, পার্সিমোন (এক প্রকার ফল) দিয়ে তৈরি পাই-ও বেশ পরিচিত। আপেল পাই-কে প্রায়ই আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
অন্যান্য মিষ্টি পাই
নারিকেল প্রেমীদের জন্য ফিলিপাইনের ‘বুকো পাই’ একটি দারুণ বিকল্প। এটি নারিকেলের শাঁস এবং ক্রিমি কাস্টার্ড দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্রিটেনের ‘বানফি পাই’ তুলনামূলকভাবে আধুনিক, যা কলা এবং টফি সস দিয়ে তৈরি করা হয়। আমেরিকার ‘কি লাইম পাই’ এবং ‘অ্যাটলান্টিক বিচ পাই’ও মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
আন্তর্জাতিক খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাই-এর এই বৈচিত্র্যময় জগৎ খাদ্যরসিকদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন