বাহরাইনের মুক্তা ব্যবসার স্মৃতি: আধুনিক স্থাপত্যের মিশেলে এক নতুন পথ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের পুরনো রাজধানী মুহারাকে, ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক অসাধারণ মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। এখানে, ‘পিয়ারলিং পাথ’ নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তা ব্যবসার সোনালী অতীতকে নতুন রূপে তুলে ধরা হয়েছে। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই পথ, বাহরাইনের সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে।
এক সময়ের সমৃদ্ধ মুক্তা ব্যবসার কেন্দ্র ছিল বাহরাইন। ১৯৩০-এর দশকে তেলের আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মুক্তা শিল্পই ছিল দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে, ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘পিয়ারলিং পাথ’ তৈরি করা হয়েছে। এটি পুরনো শহর মুহারাকের ভিতর দিয়ে গেছে, যা নতুন পাবলিক স্কোয়ার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে সংযুক্ত করেছে। পথটি তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, পুরনো স্থাপত্যগুলো সংরক্ষণ করা এবং একইসঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর ছোঁয়া আনা।
এই প্রকল্পের আওতায় ১৭টি ঐতিহাসিক ভবন সংস্কার করা হয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির সঙ্গেই এক সময়ের মুক্তা ব্যবসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এছাড়াও, এখানে তিনটি প্রবাল দ্বীপ এবং একটি দুর্গও রয়েছে। এই পথ ধরে হেঁটে গেলে, পর্যটকেরা মুক্তা শিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন, যা একসময় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। পুরনো বাড়িগুলো, যা এক সময়ের ধনী ব্যবসায়ী এবং মুক্তা ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল, সেগুলোর সংস্কার করা হয়েছে।
পথের ধারে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ ধরনের ল্যাম্পপোস্ট, যেগুলোতে মুক্তার আকারের আলো ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও, এখানে তৈরি করা হয়েছে নতুন কিছু পাবলিক স্পেস, যেখানে গাছপালা ও বসার স্থান রয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা।
‘পিয়ারলিং পাথ’-এর নকশার জন্য সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের খ্যাতনামা স্থপতিদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। বেলজিয়ান স্থপতি অফিস কার্স্টেন গিয়ার্স ডেভিড ভ্যান সেভারেন-এর ডিজাইন করা একটি পারফর্মেন্স ভেন্যু বা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে মুক্তা শিকারিদের ঐতিহ্যবাহী গান ‘ফিজরি’ পরিবেশিত হয়। এই স্থাপত্যে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।
সুইজারল্যান্ডের স্থপতি ভ্যালেরিও ওলগিয়াতির ডিজাইন করা একটি অত্যাশ্চর্য ভিজিটর সেন্টারও এখানে অন্যতম আকর্ষণ। কংক্রিট দিয়ে তৈরি এই স্থাপনাটি যেন এক প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের মতো, যা দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করে। এছাড়াও, এখানে রয়েছে পুরাতন কায়সারিয়া বাজার, যা পুরনো দিনের স্থাপত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তবে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এখানকার কার পার্কগুলো। সুইস স্থপতি ক্রিশ্চিয়ান কেরেজ-এর ডিজাইন করা এই কার পার্কগুলো দেখলে মনে হয় যেন বিশাল আকারের কোন মিষ্টির প্যাঁচানো অংশ আকাশের দিকে উঠে গেছে। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এক দারুণ উদাহরণ হলো এই কার পার্কগুলো।
‘পিয়ারলিং পাথ’ প্রকল্পটি বাহরাইনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়া এনেছে, যা এই অঞ্চলের পর্যটকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অবলম্বনে।