ইথিওপিয়ায় দ্রুত ছড়াচ্ছে কলেরা, মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে
আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা। এরই মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের সংস্থা), সংক্ষেপে এমএসএফ, জানিয়েছে, গত এক মাসে গাম্বেলা অঞ্চলে ১,৫০০ জনের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ সুদানে সহিংসতার কারণে সেখানকার মানুষজন ইথিওপিয়ায় আশ্রয় নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
এমএসএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “পশ্চিম ইথিওপিয়াজুড়ে কলেরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে, দক্ষিণ সুদানেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে, যা হাজারো মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।”
ইথিওপিয়ার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে, বিশেষ করে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল আমহারায় কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় ১২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে কলেরা একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলেরা মূলত ‘ভিব্রियो কলেরি’ নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়, যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ সুদানের আকোবো কাউন্টিতেও কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত চার সপ্তাহে সেখানে ১,৩০০ জনের বেশি কলেরা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এমএসএফ আরও জানায়, দক্ষিণ সুদানের সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, “হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
দক্ষিণ সুদান বিশ্বের নবীনতম রাষ্ট্র, যা এখনো চরম অস্থিরতা ও দারিদ্র্যের শিকার। গত বছর অক্টোবর মাসে সেখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করা হয়েছিল।
এমএসএফ জানিয়েছে, “আমরা ইথিওপিয়ায় রোগীদের চিকিৎসা করছি, পরিষ্কার পানি সরবরাহ করছি এবং রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াচ্ছি। দক্ষিণ সুদানে আমরা জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।”
সংস্থাটি আরও বলেছে, “রোগের বিস্তার বন্ধ করতে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানো, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং কলেরা টিকাদান অভিযান চালানো দরকার।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) -এর মতে, ২০২৩ সালে কলেরার কারণে বিশ্বে প্রায় ৪,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৭১ শতাংশ বেশি। এই মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে আফ্রিকায়।
ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনাও কলেরার বিস্তারকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এর ফলে সশস্ত্র সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। এর আগে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলে গৃহযুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা