জার্মানির প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের বিশাল পরিকল্পনা: ঋণনীতিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
জার্মানির আসন্ন সরকার দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে, দেশটির ঋণনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সরকারি ব্যয়ের সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে শিথিল করবে। এই পরিবর্তনের ফলে আগামী ১২ বছরে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের পাশাপাশি, অবকাঠামো খাতে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৫৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী দল, ফ্রিডরিখ মের্জের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল দল, তাদের জোটসঙ্গী সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং গ্রিন পার্টির সঙ্গে আলোচনা করে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি অর্থ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যাবে। এর মধ্যে বেসামরিক সুরক্ষা, গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং ‘অবৈধ আক্রমণের শিকার দেশগুলোকে সহায়তা’র মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মের্জ এই চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “জার্মানি আবার জেগে উঠেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তি মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়কেই বার্লিনের আত্মরক্ষার সক্ষমতা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেবে।
জার্মানিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি ‘ঋণনীতি’ প্রচলিত ছিল, যা সরকারের নতুন ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করত। সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ২০০৯ সালে এই নীতি চালু করেন এবং এর মাধ্যমে জিডিপির ০.৩৫ শতাংশের বেশি ঋণ করা যেত না। তবে, অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে এই নীতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, এটি জার্মানির অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে।
বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে জার্মানির এই সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কেও টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার ওপর নির্ভরশীল জার্মানিকে দ্রুত সামরিক খাতে অর্থ বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তবে, এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলেছে। গ্রিন পার্টি শুরুতে পরিবেশগত পদক্ষেপের অভাবের কারণে তাদের সমর্থন দিতে দ্বিধা প্রকাশ করেছিল। অবশেষে, অবকাঠামো তহবিলের প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউরো জলবায়ু সুরক্ষা খাতে ব্যয় করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
নতুন এই ব্যয় পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য নির্বাচিত পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জানা গেছে, পার্লামেন্টে কট্টর ডানপন্থী ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ এবং বামপন্থী ‘লেফট পার্টি’ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করতে পারে। তারা ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, এই পরিকল্পনা নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা