জার্মানির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে গ্রিন পার্টির সমর্থন আদায় করেছেন দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ফ্রিডরিখ মার্চ। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথ সুগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ আলোচনার পর এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে, যা জার্মান পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
খবরে প্রকাশ, জার্মানির রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ জোট এবং নতুন সরকার গঠনের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস পার্টির মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতার ফলে জার্মানির ঋণ গ্রহণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে, যা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো সংস্কারের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৫৮ লক্ষ কোটি টাকা) একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ করে দেবে।
ফ্রিডরিখ মার্চ, যিনি সম্ভবত জার্মানির পরবর্তী নেতা হতে যাচ্ছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে চান। গ্রিন পার্টির সমর্থন তাঁর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব হবে। তবে, নতুন বুন্দেসটাগে (জার্মান পার্লামেন্ট) চরম ডান ও বামপন্থী কিছু সদস্য এই ব্যয় পরিকল্পনার বিরোধিতা করতে পারেন।
গ্রিন পার্টি আগে মার্চ-এর প্রস্তাবিত তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব এবং জলবায়ু সুরক্ষার প্রতি অঙ্গীকারের দুর্বলতার সমালোচনা করেছিল। তবে, নতুন চুক্তিতে জলবায়ু সুরক্ষার জন্য বিশেষ তহবিল থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা) বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিরক্ষা ব্যয়ের আওতা বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পর্যন্ত বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছে।
জার্মানির অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যয় পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জার্মানির এই পদক্ষেপকে দেশটির নিরাপত্তা এবং ইউরোপের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি গভীর অঙ্গীকার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শেয়ার বাজারেও এই খবরের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইউরো, জার্মান সরকারি বন্ড এবং শেয়ার সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লার্স ক্লিংবেইল এই চুক্তিকে জার্মানির জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জার্মানি “নিজ পায়ে দাঁড়াতে” এবং নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। মার্চ এই চুক্তিকে তার মিত্রদের প্রতি একটি “স্পষ্ট বার্তা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বর্তমানে, জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্দেসট্যাগে বিলটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাঠ আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর এটি পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্দেসরাটে যাবে, যেখানেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। আগামী ২৫শে মার্চ জার্মানির নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান