একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা: আশাবাদী এক জীবনের গল্প।
ক্যানবেরার (Canberra) এক শান্ত দুপুরে, যখন স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছি সবে, তখনো বুঝিনি জীবনের মোড় কোন দিকে ঘুরতে চলেছে। আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু মানুষ আসে, যাদের হাসিখুশি, ইতিবাচক মনোভাব আমাদের পথ দেখায়।
তেমনই একজন ছিলেন গাই। আমাদের সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল এক বোর্ডিং স্কুলে, যেখানে ১৪ জন মেয়ের সাথে একটি কুঁড়েঘরে থাকতে হতো। শীতকালে গরম পানির জন্য কাঠ কাটতে হতো, আর উইকেন্ডে পাহাড়ে চড়া বা স্কিইং (skiing) করতে যাওয়া ছিল আমাদের নিয়মিত রুটিন।
গাই ছিলেন আমার সহপাঠী, ফ্রেঞ্চ ক্লাসে (French class) আমাদের সিট ছিল ভিন্ন সারিতে। তিনি ছিলেন খুবই হাসিখুশি, মিশুক এবং আন্তরিক।
আমাদের মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকত, কখনো টেবিল রাগবি খেলতাম, আবার কখনো একে অপরের জিনিস লুকোচুরি করতাম। ক্লাসের ফাঁকে মজার চিঠি চালাচালি তো ছিলই। স্কুলের জীবনটা আমার ভালো লাগলেও, বাবা-মায়ের ভালো লাগেনি।
তাই পরের বছর আমাকে ক্যানবেরায় ফিরতে হলো।
কিন্তু গাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ tetap ছিল। ফোনে কথা, ক্যাসেট টেপ বিনিময়—এমনকি দলবদ্ধভাবে স্কি ট্রিপে যাওয়াও চলত।
স্কুলের পর গাই হংকং (Hong Kong) থেকে ইংল্যান্ডে (England) ফিরে যান, তবে মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হতো।
একসঙ্গে ক্যানবেরা থেকে ব্রিস্টল (Bristol) এবং লেক ডিস্ট্রিক্টেও (Lake District) ঘুরেছি, আর হাসি-ঠাট্টার মধ্যে সময় কেটেছে।
এরকমই এক ভ্রমণের সময় আমি গাইকে বলেছিলাম, ‘হয় আমাকে বিয়ে করো, না হয় আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রেখো না।’ এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি হাঁটু গেড়ে বসে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন।
এরপর ২০০১ সালে, আমি আমার প্রেমিকের সাথে থাকতে যুক্তরাজ্যে (UK) যাই। লন্ডনে (London) কিছু টাকা রোজগার করে তার সাথে স্কটল্যান্ডে (Scotland) যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
লন্ডনে আসার দ্বিতীয় রাতে গায়ের সাথে দেখা হয়। তিনি একটি পাবের (pub) ভেতর থেকে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, তার চোখেমুখে আনন্দের ঝলক।
সেদিন তিনি একটি চাকরির ইন্টারভিউ (interview) দিয়ে আসছিলেন, পরনে ছিল নীল-হলুদ চেক শার্ট এবং মেরুন রঙের একটি টাই। আমরা গল্প করলাম, নাচলাম, কিন্তু আমার প্রেমিককে নিয়ে কিছু কথা উঠতেই অস্বস্তি লাগছিল।
আমি বুঝতে পারছিলাম, গাইয়ের প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়ছে, কিন্তু পুরনো সম্পর্ক ভেঙে নতুন করে কিছু শুরু করতে চাইনি। তাই তাকে কিছু না জানিয়ে আমি সম্পর্ক ভেঙে দিই।
কয়েক সপ্তাহ পর আমার বোনের অস্ট্রেলিয়া ডে’র (Australia Day) পার্টি ছিল লন্ডনে।
সেখানে গাই এসেছিলেন স্টিভ আরউইন (Steve Irwin)-এর সাজে। রাতের মাঝামাঝি সময়ে আমি গাইকে আমার সম্পর্ক ভাঙার কথা জানালাম। আমরা দু’জনে চুপচাপ বসে হাত ধরেছিলাম।
এরপর আমাদের পথচলা শুরু হয় একসঙ্গে।
চার মাস পর, গাইকে বিমানবন্দরের (airport) দিকে ছুটে আসতে দেখি। তার ব্যাগটা আনন্দের সাথে উড়ছিল।
আমাদের প্রথম ডেটিংয়ের (dating) জন্য তিনি এক ঘণ্টা দেরিতে এসেছিলেন, কারণ তিনি তার দাদার সাথে লাঞ্চ (lunch) করছিলেন এবং তার ব্যাগটি ট্রেনে (train) ফেলে এসেছিলেন।
আমরা যখন ভেনিসের (Venice) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম, তখন তিনি হাসতে হাসতে তার দেরি হওয়ার কারণগুলো বলতে শুরু করলেন। আমরা তখনও জানতাম না, আমাদের ফ্লাইট (flight) তখনও ছাড়তে দেরি আছে।
গাইয়ের মধ্যে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে, যা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পরে। তার এই ইতিবাচক মানসিকতা আমাকে সব সময় নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।
আমাদের সম্পর্কের এই ২০ বছরে আমরা একসাথে অনেক কিছু করেছি—পেশাগত জীবন, সন্তান লালন-পালন এবং জীবনের প্রতিটি বাঁকে গাই ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
আমাদের কঠিন এবং সহজ সময়ে, একঘেয়েমি এবং আনন্দের মুহূর্তে, গাইয়ের হাসি সবসময় আমাদের সঙ্গী ছিল।
গাই আমাকে মনে করিয়ে দেয়, জীবনে আসলে কোন জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ, এবং কীভাবে আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে পারি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান