লন্ডনের পুরনো একটি গুদামঘরে নতুন জীবন: এক নকশাকারীর শিল্পকর্ম।
এক সময়ের ব্যস্ততম বন্দর নগরী লন্ডনের শিল্প-ইতিহাসের সাক্ষী পুরনো একটি গুদামঘর, যা এখন একজন দক্ষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ছোঁয়ায় আধুনিক জীবনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ভেরোনিক হপকিনসন, যিনি এই গুদামঘরটিকে বাসযোগ্য করে তুলেছেন, তাঁর ডিজাইন-কৌশল মুগ্ধ করার মতো।
আঠারো শতকের শেষ দিকে, যখন লন্ডন ছিল বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর, তখন টেমস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য গুদামঘর।
চা, তামাক, চাল, ফল, চিনি ও ওয়াইন-এর মতো পণ্য সংরক্ষণের জন্য এসব গুদামঘরের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিহার্য।
সময়ের পরিক্রমায়, এই ভিক্টোরিয়ান যুগের গুদামঘরগুলোর খুব কমই টিকে আছে।
তবে যেগুলো এখনও বিদ্যমান, সেগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে আধুনিক জীবনের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা চলছে।
ভেরোনিক হপকিনসনের ডিজাইন করা এই অ্যাপার্টমেন্টটি লন্ডনের ওয়াপিং-এ অবস্থিত।
এটি ২য় গ্রেডের তালিকাভুক্ত একটি গুদামঘরের অংশ, যেখান থেকে টেমস নদীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
নদীর তীরে নৌকার আনাগোনা, কোলাহলপূর্ণ ক্রুজ এবং ড্রেজারগুলোর ব্যস্ততা সব সময় চোখে পড়ে।
জোয়ারের সময় যখন নদীর তলদেশ দেখা যায়, তখন সেখানে থাকা কর্মীরা পুরনো দিনের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে ফেরে।
ভেরোনিকের এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল আকর্ষণ হলো এর খোলা স্থান এবং শিল্পসম্মত ডিজাইন।
তিনি গুদামঘরের পুরনো কাঠামো, যেমন – ইটের দেয়াল এবং সিলিং-এর কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।
তাঁর স্বামী ব্র্যাডলি একজন ভালো রাঁধুনি, তাই রান্নাঘরটি বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছে।
এখানে বিশাল একটি স্টিলের তৈরি দ্বীপ রয়েছে, যার চারপাশে বসার জন্য বার-স্টুল রাখা হয়েছে।
রান্নাঘরের পাশেই আছে একটি ছোট স্টোররুম, যেখানে দুটি ডিশওয়াশার বসানো হয়েছে।
ঘরের প্রবেশপথ এবং সিঁড়ি নতুন করে সাজিয়ে আরও বেশি জায়গা তৈরি করা হয়েছে।
অফিসের স্থানটিকে আলাদা করতে ক্রিটাল গ্লাস প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে, যা বাইরের আলো ভেতরে আসতে সাহায্য করে।
এই প্যানেলগুলো পুরনো দিনের জানালাগুলোর নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।
ভেরোনিক তাঁর ডিজাইন-কৌশল সম্পর্কে বলেন, “আমি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান পছন্দ করি।”
তাঁর মতে, একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পরিবেশে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে আলোর ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি তাঁর বাড়িতে পুরনো দিনের চিহ্নস্বরূপ কিছু সাইনবোর্ড, একটি পুরনো জুকবক্স, চামড়ার তৈরি পাঞ্চিং ব্যাগ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা কাঠের তৈরি কিছু ভাস্কর্য ও মুখোশ ব্যবহার করেছেন।
অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালগুলোতে উজ্জ্বল রঙের চিত্রকর্ম রয়েছে, যা হলুদ রঙের ইটের দেয়ালের সঙ্গে চমৎকারভাবে মানানসই।
ডাইনিং রুমে ইউক্রেনীয় শিল্পী মাইকোলা কুরিুলুকের একটি বড় ক্যানভাস রয়েছে, যা ঘরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এছাড়াও, এখানে কাঠের তৈরি একটি লম্বা ডাইনিং টেবিল এবং চেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, যা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল।
উপরের তলার মাস্টার বেডরুমে একটি কাঠের তৈরি আফ্রিকান যুদ্ধ-মুখোশ রাখা হয়েছে, যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বিছানাটির ধাতব কাঠামোকে নরম করার জন্য আরামদায়ক কুশন এবং কার্পেট ব্যবহার করা হয়েছে।
বারান্দায় রাখা কিছু চেয়ার থেকে টেমস নদীর শান্ত দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
ভেরোনিক হপকিনসন তাঁর এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, পুরনো একটি গুদামঘরকেও রুচিশীল এবং আধুনিক একটি বাসস্থানে রূপান্তর করা সম্ভব।
তাঁর এই ডিজাইন-শৈলী বর্তমান বাংলাদেশের নগর জীবনে পুরনো ঐতিহ্যকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার ধারণা দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian