একজন অপরিচিত মানুষের উদারতা: বাঁশি ফিরে পাওয়ার এক গল্প
জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে। সিডনির এক ব্যস্ত রেল স্টেশনে ঘটে যাওয়া তেমনই এক ঘটনার কথা বলছি।
ঘটনাটি প্রায় ত্রিশ বছর আগের। নিউজিল্যান্ড থেকে আসা এক যুবক, যিনি সিডনির একটি পাব-এ কাজ করতেন (যেমন- রেস্টুরেন্টে যারা গ্লাস পরিষ্কারের কাজ করে), একদিন ট্রেনের মধ্যে তার প্রিয় বাঁশিটি হারিয়ে ফেলেন।
বাঁশিটি ছিল তার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিন কাজের শেষে বাঁশি বাজালে তার মন শান্ত হতো, জীবনের দুঃখগুলো যেন একটু হালকা হয়ে আসতো।
বাঁশি হারানোর পর তার জীবনে নেমে আসে এক গভীর হতাশা। তিনি ভেঙে পড়েছিলেন।
এরপর একদিন, অপ্রত্যাশিতভাবে, রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি ফোন আসে। তারা জানায়, তার বাঁশিটি পাওয়া গেছে।
আনন্দের আতিশয্যে তিনি ছুটে যান সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে হারানো জিনিসের স্তূপের মধ্যে তিনি তার বাঁশিটি খুঁজে পান।
কিন্তু বাঁশি ফিরে পাওয়ার আনন্দ তখনও অধরা। কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী, বাঁশি ফেরত পেতে হলে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার কাছে কোনো আইডি ছিল না, কারণ তিনি নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্টটি সঙ্গে আনেননি। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি আকুতি জানালেন, কিন্তু তারা নিয়ম ভাঙতে রাজি নন।
তখন তিনি এক ভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করলেন, যদি তিনি বাঁশি বাজিয়ে শোনান।
এই প্রস্তাবে রাজি হলেন কর্তৃপক্ষ। এরপর যা ঘটল, তা যেন এক রূপকথার মতো।
তিনি তার বাঁশিটি বের করলেন, যত্ন করে জোড়া লাগালেন, এবং বাজাতে শুরু করলেন “গ্রিনস্লিভস” নামক এক পরিচিত সুর।
সুরের মাধুর্য, হারানোর কষ্ট এবং ফিরে পাওয়ার আনন্দ যেন একাকার হয়ে ফুটে উঠলো তার বাঁশিতে।
গল্পের ভাষ্য অনুযায়ী, সুর শুনে উপস্থিত রেল কর্মচারীগণের চোখে জল এসে গিয়েছিল। তারা এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, পরিচয়পত্র ছাড়াই বাঁশিটি ফিরিয়ে দেন।
তাদের এই উদারতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
এই ঘটনার পর থেকে, ওই যুবক অপরিচিত মানুষের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হয়েছেন। তিনি অনুভব করেছেন, মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতা দেখানো কতটা জরুরি।
বড় শহরগুলোতে প্রায়ই শোনা যায়, এখানে মানুষের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি দেখেছেন, মানুষ হিসেবে আমরা কতটা মানবিক হতে পারি।
যারা আমাদের থেকে কিছুই প্রত্যাশা করে না, তাদের প্রতিও আমরা কতখানি উদার হতে পারি।
এই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত।
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে, কঠিন সময়েও আমরা অন্যের কাছ থেকে সাহায্যের হাত পেতে পারি।
তথ্য সূত্র: The Guardian