জাপানিজ খেলোয়াড়দের দাপটে বিশ্ব জয়, বেসবলে নতুন দিগন্ত।
ক্রিকেট আর ফুটবলের উন্মাদনার দেশে, অন্য একটি খেলার ঢেউ লেগেছে ধীরে ধীরে। খেলাটি হলো বেসবল, আর এই খেলার মঞ্চে আলো ছড়াচ্ছেন জাপানিজ খেলোয়াড়েরা।
সম্প্রতি, লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স এবং শিকাগো ক্লাবসের মধ্যে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হওয়া দুটি ম্যাচের মধ্যে দিয়ে এই জাপানিজ খেলোয়াড়দের জয়জয়কার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই সিরিজ যেন জাপানিজ বেসবলের উত্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বেসবলের এই বিশ্বমঞ্চে জাপানের আগমন কিন্তু আজকের নয়। ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে সান ফ্রান্সিসকো জায়ান্টসের হয়ে খেলেছিলেন মাসানরি মুরাকামি।
তবে, জাপানিজ খেলোয়াড়দের আসল উত্থান শুরু হয় ১৯৯৫ সালে, যখন হিদেও নোমো লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সে যোগ দেন। তাঁর ভিন্নধর্মী বোলিং স্টাইল, যা দর্শকদের কাছে ছিল খুবই আকর্ষণীয়, দ্রুত তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে।
নেশনাল লীগ রুookie of the year (বর্ষসেরা নবাগত খেলোয়াড়) পুরস্কার জেতার পাশাপাশি অল-স্টার দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি।
নোমোর সাফল্যের পর, জাপানিজ খেলোয়াড়দের জন্য যেন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এরপর, ২০০১ সালে সিয়াটল মেরিনার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান ইচিরো সুজুকি।
তাঁর ক্ষিপ্রতা, দক্ষতা এবং অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কারণে তিনি দ্রুতই পরিচিতি লাভ করেন এবং বেসবল ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নেন। ইচিরোর এই সাফল্যের পথ ধরে অন্যান্য জাপানিজ খেলোয়াড়দেরও আমেরিকায় খেলার স্বপ্ন সত্যি হতে শুরু করে।
ইচিরোর পর আরও অনেক জাপানিজ খেলোয়াড় সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন। হিদেকি মাতসুই নিউ ইয়র্ক ইয়ানকেসের হয়ে ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত খেলে দুটি অল-স্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া, সো তাগুচি এবং কোসুকে ফুকুডোমের মতো খেলোয়াড়রাও নিজ নিজ দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বর্তমান প্রজন্মের জাপানিজ খেলোয়াড়েরা যেন আরও একধাপ এগিয়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নাম হলেন শোওহেই ওহতানি।
ডজার্সের হয়ে খেলা এই খেলোয়াড়কে বর্তমানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে গণ্য করা হয়। এছাড়াও, ইয়োশিনোবু ইয়ামামোতো এবং রোকি সাসাকির মতো খেলোয়াড়েরা তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে সকলের নজর কেড়েছেন।
এমনকি, শিকাগো ক্লাবসের হয়ে খেলা সেইয়া সুজুকি এবং শোটা ইমানাগা-ও তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
জাপানিজ খেলোয়াড়দের এই সাফল্যের পেছনে লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সের অবদান অনস্বীকার্য। ডজার্সের রয়েছে বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস।
তাদের এই ঐতিহ্য জাপানিজ খেলোয়াড়দের প্রতিও সবসময় বজায় ছিল। ডজার্সের বর্তমান ম্যানেজার ডেভ রবার্টসও এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন, যা জাপানিজ খেলোয়াড়দের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয়।
বর্তমানে, আমেরিকার বেসবলে জাপানিজ খেলোয়াড়দের জয়জয়কার চলছে। শুধু ডজার্স বা ক্লাবসেই নয়, অন্যান্য দলেও জাপানিজ খেলোয়াড়েরা নিজেদের প্রমাণ করছেন।
ইউ দার্ভিশ, কেন্টা মায়েদা, কোডাই সেনগা এবং ইউসেই কিকুচির মতো খেলোয়াড়েরা তাদের দক্ষতা দিয়ে সকলের মন জয় করেছেন।
বেসবলের এই উত্থানে জাপানিজ খেলোয়াড়দের সাফল্যের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তাদের কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং খেলার প্রতি ভালোবাসাই তাদের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস