ইউক্রেনের খেরসন শহর— যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে অবস্থিত এই জনপদ এখন এক বিভীষিকাময় জনশূন্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার সেনারা ডিনিপ্রো নদীর ওপারে অবস্থান করছে, আর তাদের থেকে কয়েক মাইলের দূরত্বে ইউক্রেনীয় সেনারা, যাদের প্রধান দায়িত্ব হলো এখানকার বাসিন্দাদের রক্ষা করা।
কিন্তু যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে তারা কতটা নিরাপদে আছেন, তা সেখানকার জীবনযাত্রা দেখলে বোঝা যায়।
শহরের প্রধান রাস্তাগুলো এখন প্রায় জনমানবশূন্য। বাজারের প্রবেশপথে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে, কাঁচের দরজার বদলে লাগানো হয়েছে কাঠের আবরণ।
বাজারে আসা বাসিন্দাদের অধিকাংশই বয়স্ক নারী ও পুরুষ। জিনিসপত্র কিনে দ্রুত তারা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরছেন।
যুদ্ধের কারণে শহরের অনেক বাড়ির জানালা ভেঙে গেছে, দেয়ালগুলোতে দেখা যায় বোমার আঘাতের চিহ্ন।
কিন্তু এখন সবচেয়ে ভয়ের কারণ হলো আকাশে ওড়া ড্রোনগুলো। ওলেনা ভাসিলিয়েভনা শিগারেভা নামের এক নারী জানান, “ড্রোনগুলো দেখলে গা শিউরে ওঠে।
শব্দ হয়, কিন্তু তাদের দেখা যায় না। যখন দেখা যায়, তখন তারা অনুসরণ করতে শুরু করে।” তিনি আরও জানান, একবার তিনি ও তাঁর এক বন্ধু হেঁটে যাওয়ার সময় ড্রোন তাদের ওপর আক্রমণ করে।
খেরসনের বাসিন্দারা এই ঘটনাকে ‘শিকার’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে আসা কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র ক্যামেরা লাগানো ড্রোনগুলি কীভাবে সাধারণ মানুষের ওপর বোমা ফেলছে।
খেরসনের মেয়র রোমান ম্রোচকো জানান, প্রতিদিন প্রায় একশ’র মতো ড্রোন তাদের শহরের দিকে ছোড়া হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক ড্রোনকে ভূপাতিত করতে পারলেও কিছু ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে। আমরা এটিকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা হিসেবে দেখছি।”
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা একটি যুদ্ধাপরাধ।
হাসপাতালগুলোতে আহত মানুষের ভিড়। ড্রোন হামলায় আহত হওয়া বেসামরিক নাগরিকদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শয্যাগুলোতে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।
রোগীদের মধ্যে রয়েছেন বৃদ্ধা থেকে শুরু করে কিশোরও।
কারো পায়ের পাতা ভেঙে গেছে, আবার কারো কোমর পর্যন্ত নেই।
শহরের বাইরের দিকে, যেখানে ড্রোন হামলার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা কার্যত অবরুদ্ধ।
খুব ভোরে কিছু স্বেচ্ছাসেবক খাদ্য সহায়তা নিয়ে সেখানে যান। নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ত্রাণ গ্রহণ করেন এবং দ্রুত ফিরে যান।
কারণ একটাই— বাইরে থাকাটা এখন চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন