জার্মানির পার্লামেন্ট ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো খাতে কয়েকশ বিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই বিশাল অংকের ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্দেসটাগে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ৫১৩-২০৭ ভোটে পাস হয়, যেখানে কোনো সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন না। খবরটি প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রস্তাব অনুযায়ী, জার্মানির সরকার সামরিক খাতে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ ব্যয় করবে। এই বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়ের কারণ হিসেবে জার্মানির রাজনীতিবিদরা সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার আগ্রাসনকে চিহ্নিত করেছেন।
জার্মান পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা ফ্রেইডরিশ মার্চ এই প্রসঙ্গে বলেন, “ইউরোপের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধ” -এর কারণে এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিতে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ, নাশকতা, গুপ্তচরবৃত্তি এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগও করেন।
জার্মানির এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলবে। অনেকে মনে করছেন, এই ব্যয়ের ফলে জার্মানির অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা আরও সুসংহত হবে।
তবে, কেউ কেউ এই বিশাল ব্যয়ের বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং একে ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও দেখছেন।
জার্মানিতে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। গত মাসের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই সরকার গঠনের জন্য দলগুলোকে জোটবদ্ধ হতে হচ্ছে।
ফ্রেইডরিশ মার্চ এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি)-এর মধ্যে নতুন জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রিন পার্টির সমর্থন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শেষ পর্যন্ত এই বিলটি পাসে সহায়ক হয়েছে।
জার্মানির এই সিদ্ধান্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতিতেও পরিবর্তন আনবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দেশটির ‘ঋণনীতি’ শিথিল করা। ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পর সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণ করা।
তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই নীতি যথেষ্ট কার্যকর নয়।
জার্মান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্দেসরাটে বিলটি অনুমোদনের জন্য এখন অপেক্ষমান। সেখানে অনুমোদন পাওয়ার পর এটি আইনে পরিণত হবে।
এই বিশাল অংকের ব্যয়ের ফলে ইউরোজোনের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এই বিনিয়োগ জার্মানির অর্থনীতিকে মন্দা থেকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।
যদিও, একই সাথে তারা সতর্ক করে বলেছেন, এই প্যাকেজের সফলতার জন্য ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান