এডিনবরা ফ্রিন্জ উৎসবে আলোড়ন তোলা দুই মার্কিন কমেডিয়ান, যারা ‘ডাফেল ব্যাগে’ করে পরিবেশন করেন তাদের অভিনব প্রযোজনা।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলার প্রসারের জন্য এডিনবরা ফ্রিন্জ ফেস্টিভ্যাল একটি সুপরিচিত নাম। প্রতি বছর এই উৎসবে বিভিন্ন দেশ থেকে বহু শিল্পী তাদের প্রতিভা নিয়ে হাজির হন। তেমনই এক জুটি হলেন ক্লোয়ে রাইস এবং নাতাশা রোলান্ড।
হাস্যরসের মোড়কে নিজেদের বিশেষ শৈলী উপস্থাপনের মাধ্যমে তারা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। তাদের পরিবেশনাগুলো পরিচিত ‘কুয়্যার ওয়েস্টার্ন ক্লাউন শো’ হিসেবে।
২০২২ সালে, এই দুই শিল্পী তাদের ‘অ্যান্ড দেন দ্য রোডিও বার্নড ডাউন’ (And Then the Rodeo Burned Down) নামের প্রযোজনা নিয়ে উৎসবে যোগ দেন। শুরুতে মাত্র সাত জন দর্শক নিয়ে শুরু হলেও, পরবর্তীতে তারা ‘ফ্রিন্জ ফার্স্ট’ পুরস্কার জেতেন এবং তাদের শো হাউসফুল হয়।
২০২৩ সালেও তারা একই সাফল্য ধরে রাখেন, এবং এবার তাদের দ্বিতীয় প্রযোজনা ছিল ‘হোয়াট ইফ দে এইট দ্য বেবি?’ (What If They Ate The Baby?)। এরপর, ২০২৪ সালেও তারা তাদের নতুন কাজ ‘এ লেটার টু লিন্ডন বি জনসন অর গড: হুএভার রিডস দিস ফার্স্ট’ (A Letter to Lyndon B Johnson or God: Whoever Reads This First) নিয়ে আসেন।
ক্লোয়ে এবং নাতাশা- এই দুই বন্ধু তাদের হাস্যরসাত্মক পরিবেশনার মাধ্যমে আমেরিকান সংস্কৃতি এবং লিঙ্গগত বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তাদের পরিবেশনায় থাকে অভিনব কৌতুক, কথোপকথন এবং আকর্ষণীয় নৃত্যশৈলী।
তাদের প্রতিটি প্রযোজনা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। ‘হোয়াট ইফ দে এইট দ্য বেবি?’ – তে তারা ১৯৫০ দশকের পারিবারিক আদর্শের একটি নাটকীয় চিত্র ফুটিয়ে তোলেন, যেখানে তারা হালকা রঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে দর্শকদের জন্য পরিবেশনা করেন।
অন্যদিকে, ‘এ লেটার টু লিন্ডন বি জনসন অর গড’- এ তারা প্রেসিডেন্ট জনসন-এর শাসনামলের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন, যেখানে ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিষয়টিও উঠে আসে।
তাদের কাজের বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনার ধরন দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। তারা তাদের প্রযোজনাগুলোতে কোনো বিষয় সরাসরি উল্লেখ না করে, দর্শকদের নিজস্ব উপলব্ধির উপর ছেড়ে দেন।
এই প্রসঙ্গে ক্লোয়ে রাইস জানান, তারা তাদের শৈশবে অনেক কিছুই মিস করেছেন, কারণ তাদের মেয়ে হিসেবে বড় করা হয়েছে। ছেলেরা যেখানে খেলাধুলা এবং দুঃসাহসিক কাজে ব্যস্ত থাকত, সেখানে মেয়েদের মনোযোগ ছিল অন্য দিকে।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, ক্লোয়ে এবং নাতাশার এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তারা তাদের প্রযোজনাগুলোর জন্য নিজেরাই পোশাক তৈরি করেন, শব্দ এবং কোরিওগ্রাফি ডিজাইন করেন।
তাদের মতে, তারা চান তাদের কাজ আরও বড় পরিসরে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে, তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও বেশি সুযোগ এবং সুবিধার। বর্তমানে, তারা লন্ডনে তাদের দুটি শো করছেন এবং এডিনবরা উৎসবে তাদের তিনটি প্রযোজনা নিয়েই হাজির হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
তাদের এই সফলতার পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতা। তারা প্রমাণ করেছেন যে, সীমিত সম্পদ এবং সুযোগের মধ্যেও শিল্পীরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
তাদের কাজের মাধ্যমে, তারা শুধু বিনোদনই জোগান না, বরং সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যা দর্শকদের নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian