নাইজেরিয়ার একটি শহর, যা ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছিল, দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, এর মূল কারণ হলো তাদের community spirit বা সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর মায়দুগুরিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দেয়। একটানা বৃষ্টি ও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শহরের প্রায় ১৫ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সেখানকার অধিবাসীদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে, যারা আগে থেকেই বোকো হারাম জঙ্গিদের সহিংসতার কারণে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছিলেন, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল।
বন্যার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা এলিজাবেথ ফেলিক্স বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল সেটি। আমার দোকান পানিতে ডুবে গিয়েছিল এবং প্রায় ২ মিলিয়ন নাইরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা) মূল্যের জিনিসপত্র ভেসে যায়। আমি সবকিছু হারিয়েছিলাম।”
বন্যার ফলে মায়দুগুরির প্রধান বাজার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তাঘাট ভেঙে যায় এবং সেখানকার চিড়িয়াখানার ৮০ শতাংশ পশুপাখি মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার মানুষজন চরম দুর্ভোগের শিকার হন। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও শহরটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুতগতিতে শুরু হয় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ফরি রোড। সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি এগিয়ে আসে স্থানীয় তরুণ সমাজ। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং আশ্রয়হীনদের পাশে দাঁড়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ইজাসিনি ইজানি বলেন, “আমার বন্ধু এবং আমরা মিলে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের জন্য কাপড় ও রান্নার সামগ্রী সংগ্রহ করি। এছাড়া, তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দোকান মালিকরা তাদের দোকান খুলে আশ্রয়হীনদের থাকার ব্যবস্থা করেন। সরকারি ত্রাণ শিবির তৈরি হতে কয়েকদিন সময় লেগেছিল।”
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী লাওয়ান মাইগানা দ্রুত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং ফেসবুকে সাহায্যের আবেদন জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ সাহায্য করেন। সেই টাকায় খাবার কিনে দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়। সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা নৌকার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
এলিজাবেথ ফেলিক্স এখন আবার তার ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ব্যবসা এখন আগের চেয়ে ভালো চলছে। পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।”
বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাঁধের পুনর্গঠন। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮০ বিলিয়ন নাইরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা) ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে কৃষি ও জল সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতি হবে এবং ভবিষ্যতে বন্যার ঝুঁকি কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঐ অঞ্চলের মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে বোকো হারামের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের শিকার। সেখানকার মানুষজন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে শিখেছে। ইজাসিনি ইজানি বলেন, “দুর্যোগের মধ্যেও মানুষজন দ্রুত পরিস্থিতি সামলে উঠেছে এবং একে অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সবাই মিলে চেষ্টা করেছে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার।”
মায়দুগুরির এই ঘুরে দাঁড়ানো শুধু রাস্তাঘাট বা বাজারের পুনর্গঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেখানকার সান্ডা কিয়ারিমি পার্কটিও ধীরে ধীরে আগের রূপে ফিরছে। চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপক আলি আবাচা ডন বেস্ট জানান, বন্যায় অনেক পশু মারা গিয়েছিল, আবার কিছু পালিয়ে গিয়েছিল। তবে তারা সবকিছু পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
১৯ বছর বয়সী আলাi বাকুরা বলেন, “চিড়িয়াখানাটি আবার চালু হওয়ায় আমি খুব খুশি। ঈদ ও বন্ধুদের জন্মদিনের উৎসবে এখানে আসতে পারব, যা আমার শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।”
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং শহরটিকে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস