লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন আলজেরীয় বক্সার ইমান খেলিফ। প্যারিস অলিম্পিকে সোনাজয়ী এই নারী বক্সার ২০২৮ সালের আসরেও নিজের মুকুট ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে তিনি ভীত নন। খেলিফ বলেন, “আমি সরাসরি উত্তর দেব, আমি ট্রান্সজেন্ডার নই। এটা আমাকে উদ্বিগ্ন করে না, ভয়ও দেখায় না।”
গত মাসে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে মেয়েদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই সময় ট্রাম্প ইমান খেলিফকে ‘পুরুষ বক্সার’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ওই আদেশে বলা হয়, ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে না, যদি তারা ট্রান্স নারী ও মেয়েদের মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় এবং মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়।
ট্রাম্প আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যাতে তারা ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের আগে লিঙ্গ-ভিত্তিক অংশগ্রহণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অনুমোদন করে। এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চাই, তারা অলিম্পিক সংক্রান্ত সবকিছু পরিবর্তন করুক এবং এই হাস্যকর বিষয়টির সমাধান করুক।”
যদিও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির নির্বাহী বোর্ড সম্প্রতি ২০২৮ সালের গেমসে বক্সিং অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে। খেলিফ জানান, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের শিরোপা ধরে রাখতে চান।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অবশ্যই দ্বিতীয় স্বর্ণপদক জিততে চাই। আমেরিকায়, লস অ্যাঞ্জেলেসে… আমি সবকিছু দিয়ে এই সোনার পদক রক্ষা করব। আমার মনে হয়, আগের ইমান যদি তার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা নিয়ে খেলতে পারত, তবে আজকের ইমান খেলিফ আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়।”
২০২৩ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে লিঙ্গ পরীক্ষার ফলাফলের কারণে ইমান খেলিফকে লড়তে অযোগ্য ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থা (আইবিএ)। তবে আইবিএ-র ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তারা অলিম্পিকের স্বীকৃতি হারায়।
এরপর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) প্যারিসে খেলিফকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। আইওসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তখন অনেকে সমালোচনা করেছিলেন।
বর্তমানে আইবিএ-র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ‘ওয়ার্ল্ড বক্সিং’ নামের একটি সংস্থা খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বীকৃতি পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে। যদিও গ্রিসে অনুষ্ঠিতব্য আইওসির পরবর্তী অধিবেশনে এই সুপারিশের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রয়োজন।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট থমাস বাখ এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী যে, অধিবেশনটি প্রস্তাবটি অনুমোদন করবে। ইমান খেলিফ বলেন, “আমি বলতে পারি, আইবিএ এখন অতীত। আমাদের আলজেরিয়ায় একটা কথা আছে, যারা লুকানোর মতো কিছু রাখে না, তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেট এবং যৌন বিকাশে ভিন্নতা (ডিএসডি) রয়েছে এমন ক্রীড়াবিদদের নারী বিভাগে অংশগ্রহণের বিষয়টি আইওসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, যা আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
খেলিফ আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমি আশা করি আইওসির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট সত্যিকারের ক্রীড়াসুলভ মনোভাব নিয়ে নেতৃত্ব দেবেন, অলিম্পিকের নীতিগুলোর প্রতি অবিচল থাকবেন এবং ন্যায্য খেলার মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখবেন।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা