যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিকোলাস প্রসপার নামের ওই যুবক তার মা এবং দুই ছোট ভাইবোনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তার পরিকল্পনা ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে আরও ৩০ জন শিশুকে হত্যার, যা ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যা হিসেবে পরিচিত হতো। আদালত প্রসপারকে কমপক্ষে ৪৯ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।
লুটন ক্রাউন কোর্টে মঙ্গলবার প্রসপারের বিচার হয়। প্রসপার তার মা জুলিয়ানা ফ্যালকন (৪৮), ভাই কাইল ফ্যালকন (১৬) এবং বোন জি সেল ফ্যালকনকে (১৩) হত্যার কথা স্বীকার করে।
এছাড়াও, তিনি লাইসেন্স ছাড়া বন্দুক কেনা, জীবননাশের উদ্দেশ্যে বন্দুক রাখা এবং জনসম্মুখে ছুরি রাখার অভিযোগও স্বীকার করেন।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রসপার দীর্ঘদিন ধরে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে আসছিল। ঘটনার আগের দিন সে অনলাইনে ৬৫০ পাউন্ড (তখনকার হিসেবে প্রায় ৮৫ হাজার টাকার মতো) দিয়ে একটি শটগান কেনে।
সে শটগান কেনার জন্য ভুয়া লাইসেন্স তৈরি করেছিল। তার পরিকল্পনা ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাতে পরিবারের সদস্যদের ঘুমের মধ্যে হত্যা করা।
এরপর সে সেন্ট জোসেফ স্কুলে গিয়ে হামলা চালাত। প্রসপারের পরিবার যখন তার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে, তখন তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
আদালতে জানানো হয়, জুলিয়ানাকে মাথায় একটি শটগানের গুলি করে হত্যা করা হয়। তার হাত ও শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল, যা দেখে মনে হয় তিনি ছুরি দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।
জি সেলের মুখমণ্ডলে গুলি করা হয় এবং তার মৃতদেহ ডাইনিং টেবিলের নিচে পাওয়া যায়, যেন সে আত্মগোপন করার চেষ্টা করেছিল। কাইলের শরীরে ১০০টির বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল এবং তাকে একাধিকবার গুলি করা হয়।
ঘটনার পর প্রতিবেশীরা গুলির শব্দ এবং চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। প্রসপার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পালানোর সময় তার হাতে ছিল একটি ব্যাগ, যাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শটগান ও ৩৩ রাউন্ড গুলি ছিল। তার পরিকল্পনা ছিল স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে (বিদ্যালয়ের সমাবেশের সময়) গুলিগুলো ব্যবহার করার।
প্রসপারকে পরে পুলিশ একটি গাড়িতে দেখতে পায় এবং তারা তাকে আটক করে।
সেন্ট জোসেফ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌরিন মারফি জানান, তারা প্রসপারের পরিকল্পনার কথা শুনে খুবই বিস্মিত হয়েছিলেন। এই নৃশংস ঘটনাটি পুরো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো এবং অস্ত্র আইনের কঠোর প্রয়োগ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান