যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সৈনিকদের আত্মহত্যা এবং তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতার একটি হৃদয়বিদারক চিত্র সম্প্রতি তুলে ধরেছে সিএনএন। দেশটির ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগ (ভিএ) অনেক ক্ষেত্রে আত্মহননকারী সেনাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
এই ঘটনাগুলো কর্তৃপক্ষের নীতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দুর্বলতাকেই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়া বা মানসিক আঘাত পাওয়া সেনাদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে থাকে ভিএ।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে, আত্মহননকারী সেনাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো, ভিএ’র নিয়ম অনুযায়ী, প্রমাণ করতে হয় যে আত্মহত্যার কারণ ছিল সামরিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো মানসিক সমস্যা।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন সেনারা কোনো পেশাদার সাহায্য চাননি। সিএনএন-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু নিয়মকানুনের জটিলতার কারণে নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক সেনা কর্মকর্তার আত্মহত্যার জন্য তার স্ত্রীর ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, কারণ ভিএ’র মতে আত্মহত্যার কারণ ছিল দাম্পত্য কলহ, যুদ্ধকালীন মানসিক আঘাত নয়। এছাড়া, ২০ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করা এক ব্যক্তি ভিএ মেডিকেল সেন্টারে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা নেওয়ার সময় আত্মহত্যা করলে, তার পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
এই ধরনের ঘটনাগুলো সেনাদের পরিবারগুলোর জন্য বিশাল এক বোঝা হয়ে আসে। একদিকে প্রিয়জনকে হারানোর শোক, অন্যদিকে আর্থিক সংকট। অনেক পরিবার বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিপূরণের জন্য লড়াই করে যায়।
সিএনএন-এর তথ্য অনুযায়ী, গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর লেগে যায় একটি আবেদন নিষ্পত্তিতে। এমনকি এমনও হয়েছে, যে পরিবারগুলো তাদের স্বজনের সামরিক জীবনে কাটানো সময়ের চেয়েও বেশি সময় ধরে ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষা করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হওয়ার চেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ভিএ’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ১৮ জন সেনা আত্মহত্যা করেন।
এই পরিস্থিতিতে, ভিএ আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ২০২৫ সালের বাজেটে এই খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছে। তবে, ভিএ’র পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি যে, আত্মহত্যা-সংশ্লিষ্ট কতটি ক্ষতিপূরণের আবেদন তারা গ্রহণ করেছে বা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সিএনএন-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ পরিবারের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং তাদের জন্য উপযুক্ত সহায়তা নিশ্চিত করতে ভিএ’কে আরো সক্রিয় হতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে, যারা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো সময়মতো চিহ্নিত করা গেলে এবং তাদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে, আত্মহত্যার মতো ঘটনাগুলো হয়তো অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
একইসঙ্গে, আত্মহননকারী সেনাদের পরিবারের প্রতি ভিএ’র মানবিক এবং সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাঁদের ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দ্রুততম সময়ে তা নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন