চুলের সমস্যায় আধুনিক চিকিৎসা: পুরনো ওষুধ, নতুন সমাধান
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনেই উদ্বেগের কারণ হতে পারে। অনেকের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, সামাজিক জীবনেও এর প্রভাব পড়ে।
এই সমস্যার সমাধানে যুগ যুগ ধরে চলে আসা চিকিৎসার বাইরে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সম্প্রতি, চুল পড়ার চিকিৎসায় একটি নতুন পদ্ধতির কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে নব্বইয়ের দশকের একটি পুরোনো ওষুধকেই নতুনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিনোক্সিডিল: পুরোনো ওষুধ, নতুন প্রয়োগ
মিনোক্সিডিল (Minoxidil) ওষুধটি মূলত উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য ১৯৭০-এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল। তবে, গবেষকরা লক্ষ করেন যে, এই ওষুধ সেবন করা রোগীদের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে চুল গজানোর প্রবণতা দেখা যায়।
এরপর ১৯৮৮ সালে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) পুরুষদের টাক সমস্যার চিকিৎসায় মিনোক্সিডিল ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এই ওষুধটি ‘রোগেইন’ (Rogaine) নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে, যা সরাসরি মাথার ত্বকে লাগাতে হতো।
পরবর্তীকালে, ১৯৯১ সাল থেকে নারীদের জন্যও এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বর্তমানে, ত্বক বিশেষজ্ঞরা চুল পড়া কমাতে বা নতুন করে চুল গজাতে কম ডোজে মিনোক্সিডিল ট্যাবলেট আকারে ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। গবেষণা বলছে, মাথার ত্বকে লাগানোর চেয়ে ওষুধটি খাওয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করলে এটি আরও কার্যকর হতে পারে।
শুধু তাই নয়, অনেক টেলিহেলথ (Telehealth) কোম্পানি এখন অনলাইনে প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ সরবরাহ করার সুবিধা নিয়ে এসেছে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসা আরও সহজ করে তুলেছে।
ওষুধটি কীভাবে কাজ করে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিনোক্সিডিল চুলের ফলিকলে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে কাজ করে। এটি চুলের বৃদ্ধি-চক্রকে দীর্ঘায়িত করে, ফলে চুল পড়ার পরিমাণ কমে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
সাধারণত, এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য খুব কম ডোজের প্রয়োজন হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডোজের অর্ধেক এবং নারীদের ক্ষেত্রে এক-চতুর্থাংশ ডোজই যথেষ্ট হতে পারে।
এই ওষুধের সুবিধা এবং অসুবিধা
মিনোক্সিডিল ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এটি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। হৃদরোগ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অথবা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় না।
চুল পড়ার চিকিৎসার অন্য উপায়
চুল পড়ার চিকিৎসার জন্য এফডিএ অনুমোদিত আরেকটি ওষুধ হলো ফিনাস্টেরাইড (Finasteride), যা ‘প্রোপেসিয়া’ (Propecia) ব্র্যান্ড নামে পরিচিত। এই ওষুধটি টেস্টোস্টেরনের একটি উপজাতকে বাধা দেয়, যা পুরুষদের চুল পড়ার জন্য দায়ী।
ফিনাস্টেরাইড মিনোক্সিডিলের চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে, তবে এর কিছু যৌন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অনেক সময়, ভালো ফল পাওয়ার জন্য এই দুটি ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
কেন মিনোক্সিডিল ট্যাবলেট এখনো এফডিএ-অনুমোদিত নয়?
মিনোক্সিডিল-এর পেটেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এটি একটি কম দামের জেনেরিক ওষুধ হিসেবে পাওয়া যায়। ফলে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলির নতুন করে গবেষণা করে এফডিএ থেকে অনুমোদনের জন্য বেশি অর্থ বিনিয়োগ করার আগ্রহ নেই।
তাই, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীদের জন্য ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশে চিকিৎসা এবং পরামর্শ
বাংলাদেশেও এখন অনেক ত্বক বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আপনার যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তবে দেরি না করে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তিনি আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করতে পারবেন। এছাড়া, অনলাইনে প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ সরবরাহ করার মতো কিছু পরিষেবা বর্তমানে চালু হয়েছে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসা আরও সহজ করে তুলেছে।
সতর্কতা: এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যের উদ্দেশ্যে। এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়।
কোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন qualified ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস