মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব, টিকাকরণের গুরুত্ব এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন একটি নিবন্ধ নিচে দেওয়া হলো:
যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব : বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি অঞ্চলে এই রোগের বিস্তার ঘটেছে এবং এতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, টিকাকরণের (vaccination) মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করা কতটা জরুরি। বিশেষ করে, হামের মতো অতি সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে টিকাকরণের বিকল্প নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, টিকাকরণের প্রতি অনীহা বা দ্বিধা (vaccine hesitancy) এর অন্যতম কারণ।
অনেক মানুষ মনে করেন, টিকা গ্রহণ না করলে তারা আরও বেশি সুস্থ থাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা হয়তো তাদের আশেপাশের টিকা নেওয়া মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।
এই সম্মিলিত সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা “হার্ড ইমিউনিটি” (herd immunity) নামে পরিচিত, টিকাকরণের উচ্চ হারের মাধ্যমে তৈরি হয়। যখন জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টিকা নেয়, তখন রোগ সহজে ছড়াতে পারে না এবং সমাজের দুর্বল অংশ, যেমন – শিশু, বৃদ্ধ অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিরা সুরক্ষিত থাকে।
দুর্ভাগ্যবশত, টিকা নিয়ে ভুল ধারণা এবং কুসংস্কারের কারণে হার্ড ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
কিছু মানুষ, যারা আগে টিকাকরণের গুরুত্ব বুঝতে চাননি, তারাও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
আমাদের দেশেও টিকাকরণের হার অনেক বেশি, তবে এখানেও কিছু মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে।
হাম, পোলিও, রুবেলাসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শিশুদের টিকাকরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
টিকাকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা এবং টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ।
এর বিস্তার রোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
এছাড়াও, টিকাকরণের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি বজায় রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশেও টিকাকরণের হার আরও বাড়াতে হবে।
টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করতে হলে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়াও, টিকাসংক্রান্ত গুজব ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ ও রোগমুক্ত জাতি গঠনে টিকাকরণের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন