শিরোনাম: প্রায় সবকিছুতেই অ্যালার্জি: এক নারীর জীবনযুদ্ধ
ছোটবেলা থেকেই বাদামে অ্যালার্জি ছিল, কিন্তু আঠারো বছর বয়সে এক ভয়ংকর ঘটনার পর যেন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সাথে মিন্ট চকোলেট চিপ আইসক্রিম খাওয়ার পরেই শুরু হলো জীবন-সংগ্রাম।
মারাত্মক অ্যালার্জির কারণে হাসপাতালে দৌড়াতে হলো, এরপর থেকে ধীরে ধীরে খাদ্যের তালিকা ছোট হতে শুরু করলো। এই বিরল রোগের নাম ‘মাস্ট সেল অ্যাক্টিভেশন সিনড্রোম’ (MCAS), যা শরীরে এত বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে, আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সবকিছুতেই অ্যালার্জির শিকার হন।
ওই ঘটনার পর ডাক্তাররা প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো মানসিক চাপ অথবা প্রাক্তন প্রেমিকের কারণে এমনটা হচ্ছে।
কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল, শরীরে এমন কিছু খাবার অবশিষ্ট নেই যা তার জন্য নিরাপদ। প্রথমে ওটস, ডিম, বেকন আর জল ছাড়া কিছুই খেতে পারতেন না তিনি।
কয়েক মাস পর যখন খাদ্যের তালিকা আরও সংকুচিত হয়ে গেল, তখন জীবন ধারণের জন্য শুধুমাত্র ওটস আর পানিই ছিল সম্বল।
চিকিৎসকরা তখন একটি বিশেষ ফর্মুলা তৈরি করেন, যা শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল এবং ক্যালোরির চাহিদা মেটাতো।
এই কঠিন পথচলার মধ্যেও তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নিতে অনলাইনে লেখালেখি শুরু করেন, যা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
বিভিন্ন মানুষ তাকে ওটমিল কুকি বা ওট প্যানকেকের মতো রেসিপি তৈরি করতে উৎসাহিত করেছেন, যা খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য যোগ করতে সাহায্য করেছে।
এই রোগের কারণে জীবনযাত্রায় এসেছে বিশাল পরিবর্তন।
পোষা প্রাণী, পালক বা উলের কাছাকাছি যাওয়াও তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বন্ধুদের সাথে দেখা করার আগে পোশাক পরিবর্তন করতে হয়, কারণ তাদের শরীরে লেগে থাকা অ্যালার্জেনও তার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এমনকি চুমু খাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রেমিককে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়, যাতে কোনো অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ না করে।
তবে, এত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি জীবনকে ভালোবাসেন।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে, পার্কে হাঁটতে, আইস স্কেটিং করতে, এমনকি পরিবারের সাথে নৌকায় ভ্রমণেও যান।
ভ্রমণের সময় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখেন।
বর্তমানে, তিনি ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে নতুন খাবার যুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
যদিও এই প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন, কারণ নতুন কোনো খাবার খেলেই তার শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভবিষ্যতে খাদ্য তালিকায় আরও কিছু যোগ করা যাবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
আমার জীবন হয়তো অনেকের থেকে আলাদা, কিন্তু আমি আমার বন্ধু এবং পরিবারের সমর্থনকে সবসময় গুরুত্ব দিই। এই কঠিন সময়ে তারা আমার পাশে ছিল।
আমি সবার কাছে সহানুভূতি আশা করি, বিশেষ করে যাদের কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান