ব্রিটিশ-সোমালি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘মুনা’ এখন বিবিসি আইপ্লেয়ারে
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘মুনা’ এখন ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্রিটিশ-সোমালি সংস্কৃতি এবং জীবনের নানা দিক এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ওয়ারদা মোহামেদ, যেখানে অভিনয় করেছেন কোসার আলী।
‘মুনা’ মূলত একজন ব্রিটিশ-সোমালি কিশোরীর গল্প, যে তার না-দেখা দাদার মৃত্যুতে শোকাহত। কোসার আলী (যিনি ‘রকস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন) এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিতে মা ও মেয়ের সম্পর্ককে গভীর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের কাছে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী হয়েছে।
ওয়ারদা মোহামেদ জানান, এই ছবিতে শোকের অনুভূতিকে তুলে ধরা হয়েছে, যা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোসার আলীর মতে, এই ধরনের গল্প খুবই বিরল, যেখানে মুসলিম সংস্কৃতিকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়।
ওয়ারদা মোহামেদ এর আগে ‘দুগসি ডেজ’ নামে একটি নাটক পরিচালনা করেছিলেন। তিনি সব সময় চেয়েছেন ব্রিটিশ-সোমালি জীবনের একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরতে। তাঁর মতে, পশ্চিমা চলচ্চিত্রে সোমালিদের সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল, যা তিনি দূর করতে চেয়েছেন।
কোসার আলীও মনে করেন, মুসলিমদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে, উপযুক্ত সোমালি অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ওয়ারদা মোহামেদ জানান, অনেক সময় সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজে বের করতে হয়েছে।
‘মুনা’ ছবিতে শোকের পাশাপাশি সংস্কৃতি, পরিবার এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতাও তুলে ধরা হয়েছে। কোসার আলী, যিনি এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি প্রযোজকের দায়িত্বও পালন করেছেন, মা ও মেয়ের সম্পর্ককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তাঁর মতে, এটি কেবল দুটি সংস্কৃতির সংঘাত নয়, বরং এটি দুটি মানুষের পারস্পরিক বোঝাপড়ার গল্প।
ছবিটির আবহসংগীত তৈরি করা হয়েছে আধুনিক ব্রিটিশ এবং ঐতিহ্যবাহী সোমালি সুরের মিশ্রণে। কোসার আলী জানান, তিনি চেয়েছেন সঙ্গীত এবং নাচের মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে।
ছবিতে দাদার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একজন উপযুক্ত ওউদ বাদক খুঁজে পাওয়াও কঠিন ছিল। অবশেষে, ওয়ারদা মোহামেদ তাঁর পরিবারের মাধ্যমে মোগাদিশুর একজন সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। ওয়ারদা মোহামেদ বলেন, “সোমালিয়ায় ছবিটির শুটিং করাটা ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা, যা ব্রিটিশ-সোমালি জীবনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।”
ওয়ারদা মোহামেদ একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাই তিনি চেয়েছেন, তাঁর ছবির নির্মাণ প্রক্রিয়াতেও সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকুক। তাঁর মতে, ছবিতে প্রার্থনার দৃশ্যগুলো কেবল অভিনয় ছিল না, বরং তা ছিল তাঁদের আন্তরিক বিশ্বাস ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
ওয়ারদা মোহামেদ আরও জানান, একজন সাধারণ ঘরের চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাঁকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁর মতে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁদের গল্পগুলো বুঝতে চান না। তিনি মনে করেন, এই ধরনের গল্প বলার জন্য বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা মানুষের প্রয়োজন, যারা উন্নয়ন, পরিচালনা এবং চিত্রনাট্য তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করবেন।
বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর, ‘মুনা’ এখন বিবিসি আইপ্লেয়ারে মুক্তি পেয়েছে। ওয়ারদা মোহামেদ বলেন, “আইপ্লেয়ারে মুক্তির ফলে ‘মুনা’ যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।”
ওয়ারদা মোহামেদ ব্রিটিশ চলচ্চিত্রে সোমালিদের গল্প বলার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গল্পগুলো লিখে যেতে হবে, তৈরি করতে হবে, এবং বলতে হবে। আশা করি, মানুষ একদিন আমাদের সেভাবেই দেখবে, যেভাবে আমরা নিজেদের দেখতে চাই।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান