অ্যাপল টিভি-র জনপ্রিয় সিরিজ ‘সেভারেন্স’-এর দ্বিতীয় সিজনে কর্পোরেট সংস্কৃতির প্রতি কর্মীদের প্রতিরোধের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই সিরিজে কর্মপরিবেশের জটিলতা, কর্মীদের মধ্যেকার সম্পর্ক, এবং কর্পোরেট স্বার্থের দ্বন্দ্ব অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সিরিজটির গল্পে দেখা যায়, ‘লুমন’ নামের একটি কর্পোরেশন তাদের কর্মীদের মস্তিষ্কে ‘সেভারেন্স’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা তাদের কর্মজীবনের স্মৃতি ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে। কর্মীদের কাজের সময় তারা ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানে না, আবার ব্যক্তিগত জীবনে কর্মজীবনের কোনো স্মৃতি তাদের মনে থাকে না।
এই অভিনব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন আদায় করার চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয় সিজনে, হারমনি কোবেল নামের একজন কর্মীর চরিত্র এই কর্পোরেট কাঠামোর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিজের পুরনো চাকরিটি ধরে রাখতে চাওয়ার মাধ্যমে, তিনি কোম্পানির নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কোবেলের এই পদক্ষেপ যেন আধুনিক কর্পোরেট বিশ্বে কর্মীদের অধিকার আদায়ের এক প্রতিচ্ছবি।
“সেভারেন্স”-এর এই গল্প বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কর্মীদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রতিধ্বনি। একদিকে যেমন কর্মীদের কাজের চাপ বাড়ছে, তেমনি তাদের সুযোগ-সুবিধাও কমে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে, কর্মীদের মধ্যে ‘কুইট কোয়ায়েট’-এর মতো প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে কর্মীরা কাজের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে এবং ব্যক্তিগত জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠনগুলোর ধর্মঘট, যেমন – ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (UAW), হলিউড অভিনেতা ও লেখকদের ধর্মঘট, এবং বিমানকর্মীদের ধর্মঘট – কর্পোরেট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে কর্মীদের প্রতিরোধের প্রমাণ। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, কর্মীরা এখন তাদের অধিকারের বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছেন এবং তাদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
“সেভারেন্স” শুধু একটি বিনোদনমূলক সিরিজ নয়, বরং এটি কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি বাস্তব চিত্র। যেখানে কর্মীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোম্পানির মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
এই সিরিজে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। “সেভারেন্স”-এর গল্প যেন বর্তমান সমাজেরই প্রতিচ্ছবি।
যেখানে কর্মীরা কর্পোরেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। তথ্যসূত্র: সিএনএন