শিরোনাম: ভেগান চিজ: বাড়ছে চাহিদা, বাংলাদেশের বাজারে কেমন সম্ভাবনা?
বর্তমানে সারা বিশ্বে ভেগান বা নিরামিষ খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষার তাগিদে অনেক মানুষ প্রাণীজ খাবার ত্যাগ করে উদ্ভিজ্জ খাবারের দিকে ঝুঁকছেন।
ভেগান খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দুগ্ধজাত পণ্যের বিকল্প। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের ভেগান চিজ বা পনির পাওয়া যাচ্ছে, যা দুধ থেকে তৈরি পনিরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি, ভেগান চিজ নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এর স্বাদ, উপাদান এবং গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এই নিবন্ধে আমরা সেই পর্যালোচনার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরব এবং একইসাথে বাংলাদেশের বাজারে এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।
পর্যালোচনাটিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভেগান চিজের স্বাদ এবং মানের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। পর্যালোচনা অনুযায়ী, ভেগান চিজ তৈরিতে সাধারণত বাদাম, সয়াবিন বা নারকেল তেল ব্যবহার করা হয়। কিছু ভেগান চিজ প্রস্তুতকারক কারখানায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ উপাদান ব্যবহার করে, যা স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে।
পর্যালোচনাটিতে কয়েকটি ভেগান চিজের ভালো-মন্দ দিক তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘লা ফক্সমagerie শোরডিচ স্মোকড’ নামের একটি চিজকে সেরা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটির স্বাদ অনেকটা গরুর দুধের চিজের মতোই এবং এটি সহজে গলিয়ে ব্যবহার করা যায়।
অন্যদিকে, ‘ক্যাথেড্রাল সিটি প্ল্যান্ট বেসড’ নামের একটি চিজ তীব্র স্বাদের কারণে অনেকের কাছে প্রিয় হতে পারে। তবে এটিতে কিছু প্রক্রিয়াকরণ উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। ‘কিন্ডা কো ফার্মহাউস’ নামের একটি চিজ তৈরি হয় কাজুবাদাম ও মিসো দিয়ে, যা স্বাদে অনন্যতা যোগ করে।
এছাড়াও, ‘সি’ ডেইরি’, ‘বুট আইল্যান্ড শীজ’, ‘এম এন্ড এস প্ল্যান্ট কিচেন’, ‘টেসকো ফ্রি ফ্রম’, ‘নুরিশ’ এবং ‘অ্যাপলউড’ এর মতো ব্র্যান্ডগুলোকেও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
পর্যালোচনায় ভেগান চিজগুলোর স্বাদ, গঠন এবং উপাদানের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিছু চিজ খুবই উন্নত মানের, আবার কিছু ক্ষেত্রে উপাদান এবং স্বাদের কারণে কম নম্বর পেয়েছে। ভেগান চিজের স্বাদ দুধের পনিরের মতো নাও হতে পারে, তবে যারা নিরামিষ খাবার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে কি এই ভেগান চিজ পাওয়া যায়? বর্তমানে, ভেগান খাবারের চাহিদা বাড়লেও, ভেগান চিজ এখনো সহজলভ্য নয়। সাধারণত, বড় সুপারশপগুলোতে কিছু ভেগান পণ্য পাওয়া গেলেও, চিজের বিকল্প সেভাবে দেখা যায় না।
তবে, অনলাইনে কিছু ভেগান চিজ পাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশে ভেগান চিজের বাজার তৈরির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, মানুষ খাদ্য-উপকরণ সম্পর্কে আরো সচেতন হচ্ছে। ভেগান খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, তাই ভেগান চিজের চাহিদাও ভবিষ্যতে বাড়বে।
এক্ষেত্রে, ভেগান চিজ আমদানির পাশাপাশি, দেশেই এর উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে ভেগান চিজ তৈরি করা হলে, তা একদিকে যেমন সহজলভ্য হবে, তেমনি দামেও সাশ্রয়ী হবে। এছাড়াও, স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে এই ধরনের চিজ তৈরি করা সম্ভব, যা বাজারের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।
বর্তমানে, আমাদের দেশে পনির একটি পরিচিত খাদ্য উপাদান। তাই, ভেগান চিজের স্বাদ এবং গঠন যদি দেশীয় পনিরের কাছাকাছি আনা যায়, তাহলে এটি ভোক্তাদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। ভেগান চিজ প্রস্তুতকারকদের স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হবে।
ভেগান চিজের বাজার প্রসারিত করতে হলে, এর উপকারিতা সম্পর্কে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
উপসংহারে বলা যায়, ভেগান চিজ একটি উদীয়মান বাজার, যা বাংলাদেশেও তার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে, এই বাজারের বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান