পুরোনো দিনের চিঠি লেখার অভ্যাস, যা একসময় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, বর্তমানে নতুন করে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ডিজিটাল দুনিয়ার এই যুগে, যেখানে মুহূর্তের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব, হাতে লেখা চিঠির আবেদন যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি, ‘পেনপালোজা’ নামের একটি প্রকল্প এই পরিবর্তনের সাক্ষী, যেখানে ১৫,০০০ এর বেশি মানুষ চিঠি লেখার এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা হলেন র্যাচেল সাইম। তিনি মনে করেন, চিঠি লেখা নিছক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শিল্প।
তাঁর মতে, চিঠি লেখার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সাইম তাঁর অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘সাইম’স লেটার রাইটার: এ গাইড টু মডার্ন করেসপন্ডেন্স’। বইটি মূলত ভিক্টোরিয়ান যুগের একটি ম্যানুয়াল থেকে অনুপ্রাণিত, যেখানে কীভাবে চিঠি লিখতে হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে।
চিঠি লেখার গুরুত্ব বোঝাতে সাইম বিভিন্ন বিখ্যাত লেখক এবং তাঁদের চিঠির উদাহরণ তুলে ধরেছেন। যেমন, বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশিল্পী জুলিয়া চাইল্ড তাঁর বন্ধু অ্যাভিস ডিভোটোর সঙ্গে সারা জীবন ধরে চিঠি আদান-প্রদান করেছেন, যেখানে তাঁরা নিজেদের স্বপ্ন, ভয় এবং রান্নার নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন।
একইভাবে, জেমস জয়েস তাঁর স্ত্রীকে লেখা প্রেমপূর্ণ চিঠিগুলোতে ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করেছেন। সাহিত্যিক জেন অস্টেনও তাঁর বোনকে চিঠি লিখতেন, যা তাঁর অনুভূতি প্রকাশের এক মাধ্যম ছিল।
সাইমের মতে, চিঠি লেখার প্রক্রিয়াটি সময় এবং স্থানের ঊর্ধ্বে। এখানে তাড়াহুড়োর কোনো অবকাশ নেই।
একটি চিঠি ধীরে সুস্থে লেখার সুযোগ থাকে, যা ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। চিঠি লেখার মাধ্যমে মানুষ নিজের রুচি এবং আগ্রহগুলো অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে।
চিঠি লেখার আগ্রহীদের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন সাইম। তিনি বলেছেন, প্রথমে বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে চিঠি লেখার অভ্যাস শুরু করা যেতে পারে।
বর্তমানে, বিভিন্ন সংস্থা পেন প্যাল বা বন্ধু খুঁজে নিতে সাহায্য করে। ‘লেটরস টু স্ট্রেঞ্জার্স’-এর মতো কিছু সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চিঠি লেখার সুযোগ করে দেয়। এছাড়াও, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড নিডস মোর লাভ লেটার্স’ এর মতো কিছু সংগঠন অন্যদের সাহায্য করার জন্য চিঠি লেখার ব্যবস্থা করে।
র্যাচেল সাইম মনে করেন, প্রথম দিকে চিঠি লেখাটা কিছুটা বোকা ও পুরনো দিনের মতো মনে হতে পারে। তবে, তাঁর মতে, একটি চিঠি, তা যেমনই হোক না কেন, প্রাপকের মনে আনন্দের ঢেউ তোলে।
তথ্য সূত্র: The Guardian