মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বার্ষিক রিপোর্টে মাদক চক্রকে প্রধান জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি তারা সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গেছে, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নীতির একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, গত প্রায় ২০ বছরের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে।
এই মূল্যায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ঝুঁকির কোনো উল্লেখ ছিল না। অথচ ট্রাম্পের আগের প্রশাসনগুলো তাদের মূল্যায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো এবং পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মাদক চক্রগুলো “লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়ায়।” এতে আরও বলা হয়, ফেন্টানাইল ও অন্যান্য শক্তিশালী সিনথেটিকopioid-এর কারণে কেবল ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
যদিও আগের বছরের তুলনায় এটি প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। সম্ভবত ওভারডোজের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ন্যালক্সোনের সহজলভ্যতার কারণেই এই সংখ্যা কমেছে।
তবে মাদকাসক্তিতে মৃত্যুর হার কমলেও মাদক চক্রগুলোর ক্ষমতা কমেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেক্সিকো-ভিত্তিক আন্তঃজাতিক অপরাধ চক্রগুলো ল্যান্ডমাইন, মর্টার এবং গ্রেনেডসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করে মেক্সিকোতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর মার্কিন সামরিক বাহিনী মেক্সিকোর মাদক চক্রগুলোর ওপর নজরদারি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সিএনএন এর আগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অত্যাধুনিক গোয়েন্দা বিমানগুলি বাজা উপদ্বীপের চারপাশে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় কমপক্ষে ১৮টি মিশনে অংশ নিয়েছে।
মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (DEA) বলছে, মাদক পাচারকারীরা সাধারণত সীমান্ত দিয়ে মাদক সরবরাহ করে থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ফেন্টানাইলের বেশিরভাগ উপাদান চীন থেকে আসে।
সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ একসময় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, ফেন্টানাইলের কাঁচামাল উৎপাদন বন্ধ করতে চীন সরকারের প্রচেষ্টা “সীমিত” এবং “অনিয়মিত” ছিল। তিনি আরও জানান, চীনে ৬০০-এর বেশি কোম্পানি রয়েছে যারা এই রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে এবং এই ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
ফেন্টানাইলের উৎপাদনে চীনের ভূমিকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেইজিংকে “বদনাম” করার অভিযোগ এনেছেন।
তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মাদক সমস্যার জন্য চীনকে দায়ী করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ফেন্টানাইলের কাঁচামাল সরবরাহকে দায়ী করেছে।
আগের বছরগুলোতে, ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ও প্রভাবের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের (ODNI) প্রতিবেদনে “জলবায়ু পরিবর্তন” শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি।
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কার্যক্রম তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচিগুলো কমিয়ে দিলে তা মার্কিন সেনা ও সামরিক কার্যক্রমের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং, যিনি ডেমোক্রেটদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করেন, তিনি ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স,কে প্রশ্ন করার সময় জলবায়ু পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করা এড়িয়ে যান। ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের বক্তব্য অনুযায়ী, পরিবেশগত বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা অবগত আছেন এবং কীভাবে এগুলো সামরিক কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়েও তারা সচেতন।
তবে তাদের মূল ফোকাস হল আমেরিকানদের নিরাপত্তা, সুস্থ জীবন এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে এয়ারফোর্সের সাবেক সহকারী সচিব ড. রবি চৌধুরী সিএনএনকে জানান, জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচিগুলো কেবল চীনসহ অন্যান্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সুবিধা এনে দেয় তাই নয়, এটি সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন