পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিবাহ ও জন্মহারকে গুরুত্ব দেওয়ার বিতর্কিত এক নীতি গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রীসভার সদস্য। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে পরিবহনখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রী (পরিবহন সচিব) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই শান ডাফি নামের একজন এই নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতি অনুযায়ী, যে সব অঞ্চলে বিবাহ ও জন্মহার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি, সেখানকার পরিবহন প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মূলত, ট্রাম্পের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলো, যেখানে সাধারণত জন্মহার বেশি, তারা এই নীতির সুবিধা পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্ম ও বিবাহ হারের ভিন্নতা নিয়ে গবেষণা রয়েছে। সেই গবেষণা ও অন্যান্য ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই নীতির কারণে টেক্সাস এবং পশ্চিমা রাজ্যগুলোর মতো দ্রুত বর্ধনশীল শহরগুলো বেশি সুবিধা পেতে পারে। অন্যদিকে, যেসব শহরে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার প্রবণতা কম, তারা ক্ষতির শিকার হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেন শহরের মেয়র জাস্টিন এলিকার বলেছেন, “রাস্তা বানানোর সঙ্গে সন্তান জন্ম দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি স্পষ্টতই রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে অর্থ বরাদ্দের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, শান ডাফি এই নীতির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “যেসব কমিউনিটিতে পরিবার ও শিশুদের সংখ্যা বেশি, সেখানেই উন্নয়নের সম্ভাবনা বেশি। আমরা সেই উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে চাই এবং আমাদের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করব, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন নজির আগে দেখা যায়নি। পরিবহন পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন নীতির বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, সে বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট ধারণা দরকার। উদাহরণস্বরূপ, ফেডারেল সরকার রাজ্য, কাউন্টি নাকি শহরের ভিত্তিতে এই হারগুলো বিবেচনা করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে, বিবাহ হারের হিসাব সহজ নয়। কোনো একটি অঞ্চলের কতজন বাসিন্দা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, সেই হিসাব করতে হয়। এক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরে বিবাহ ও জন্মহার অনেক বেশি। কারণ, এখানে অনেক মানুষ বিয়ে করতে আসেন। ডাফির এই নীতির কারণে নেভাদায় দ্রুতগতির রেল প্রকল্পসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যেসব রাজ্যে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন, সেখানকার জন্ম ও বিবাহ হার, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হওয়া রাজ্যগুলোর চেয়ে বেশি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের জেতা রাজ্যগুলোর ৭০ শতাংশের বেশি রাজ্যে জন্মহার জাতীয় গড়ের উপরে ছিল, যেখানে হ্যারিসের জেতা রাজ্যগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের এই হার দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্ম ও বিবাহ হারে এই ভিন্নতার পেছনে বয়সের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যেসব অঞ্চলে তরুণ প্রজন্মের বসবাস বেশি, সেখানে জন্ম ও বিবাহের হারও বেশি থাকে। এছাড়া, ধর্মীয় বিশ্বাসও একটি কারণ। কারণ, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধর্মীয়ভাবে সক্রিয়, তাদের মধ্যে সন্তান জন্ম দেওয়ার এবং অল্প বয়সে বিয়ে করার প্রবণতা বেশি।
পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে উচ্চ জন্মহার ও বিবাহ হারকে গুরুত্ব দিলে, উচ্চ-আয়ের অঞ্চল এবং শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলো বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে, মহাসড়কগুলোতে বেশি অর্থ বিনিয়োগ হতে পারে, তবে গণপরিবহনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবহন মন্ত্রীর এই নীতি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশটির রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো জন্মহার ও বিবাহ হারের ভিত্তিতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের পক্ষে কথা বলছে। তাদের মতে, এটি পরিবার-বান্ধব একটি পদক্ষেপ।
তবে, কেউ কেউ মনে করেন, পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের এই নীতির পরিবর্তে সরকার শিশুদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে পারে, যেমন – শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া অথবা পরিবারের জন্য বেতনসহ ছুটি নিশ্চিত করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন