মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় নবজাতকের অভিভাবকদের জন্য দূর থেকে ভোট দেওয়ার নিয়ম চালুর প্রস্তাব নিয়ে রিপাবলিকান দলের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। স্পিকার মাইক জনসন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন, যা নিয়ে ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান আনা পাউлина লুনার সঙ্গে তার বিরোধ চরম আকার নিয়েছে।
বিষয়টির জেরে রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে উত্তেজনা বাড়ছে, কারণ অনেকেই জনসনের এই পদক্ষেপকে পরিবার-বিরোধী হিসেবে দেখছেন।
মূলত, নতুন মা-বাবাদের ভোট দেওয়ার সুবিধার জন্য আনা পাউলীনা লুনা ‘প্রক্সি ভোটিং’-এর (Proxy Voting) পক্ষে সওয়াল করছেন। প্রক্সি ভোটিং হলো এমন একটি নিয়ম, যেখানে কোনো সদস্য ব্যক্তিগত কারণে সভায় উপস্থিত থাকতে না পারলে, অন্য কারো মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন।
জানা গেছে, গত বছর সন্তান জন্ম দেওয়ার পর লুনা নিজে কয়েক সপ্তাহ ভোট দিতে পারেননি। এর পরেই তিনি এই প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু স্পিকার জনসন এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করছেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের ভোটিং পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী।
অন্যদিকে, জনসনের এই মতের কারণে দলের অনেক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, জনসন এমন একটি সময়ে এই বিরোধিতা করছেন, যখন কংগ্রেসে তরুণ বাবা-মায়ের সংখ্যা বাড়ছে।
রিপাবলিকান দলের অনেক সদস্য মনে করেন, এই নিয়ম চালু হলে নতুন বাবা-মায়েরা তাদের পরিবারের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন, আবার একইসঙ্গে আইনসভার কাজেও সক্রিয় থাকতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রিপাবলিকান দলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, দলের কয়েকজন সদস্য জনসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।
জানা গেছে, রিপাবলিকান দলের অন্তত চারজন সদস্য লুনাকে সমর্থন করতে পারেন। তবে, এখনো পর্যন্ত কতজন সদস্য জনসনের বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, তা স্পষ্ট নয়।
লুনার প্রস্তাবকে আটকাতে জনসন ইতিমধ্যে চেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই প্রস্তাব যাতে ভোটাভুটিতে না আসে, সে বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি অন্য একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, এই বিতর্কের কারণে আনা পাউলীনা লুনা সম্প্রতি কট্টর রক্ষণশীল ‘ফ্রিডম ককাস’ (Freedom Caucus) ত্যাগ করেছেন। ফ্রিডম ককাস হলো রিপাবলিকান পার্টির একটি প্রভাবশালী অংশ, যারা সাধারণত রক্ষণশীল নীতি সমর্থন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনসনের এই সিদ্ধান্তের কারণে দলের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়তে পারে। কারণ, বর্তমানে আইনসভায় রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই সামান্য। এমতাবস্থায়, দলের কোনো সদস্যের অনুপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে, বিষয়টি এখন বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। এখন দেখার বিষয়, রিপাবলিকান দলের সদস্যরা এই বিষয়ে কিভাবে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন এবং এই বিতর্কের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হয়।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।