যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি: চীনকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে ট্রাম্পের শুল্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি করা গাড়ির যন্ত্রাংশ ও গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা সম্ভবত চীনকে সুবিধা এনে দিতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কের কারণে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের প্রতিযোগিতায় সুবিধা হবে।
খবর অনুযায়ী, এই শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং দেশটির শিল্প ভিত্তি ও সরবরাহ শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করা।
তথ্যানুসারে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন এবং গাড়ি আমদানি করেছে। এর প্রধান উৎস ছিল মেক্সিকো, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও কানাডা।
কিন্তু ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির ফলে, চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অন্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ইউরোপ, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারকদের ওপর এই শুল্কের কারণে আর্থিক চাপ বাড়বে, ফলে তারা প্রতিযোগিতায় দুর্বল হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য অন্যান্য বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে এর প্রভাব বেশি দেখা যেতে পারে।
বর্তমানে চীন বৈদ্যুতিক গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং ব্যাটারি উৎপাদনে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এমনকি, চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি (BYD) গত বছর বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আয়ে টেসলাকে (Tesla) ছাড়িয়ে গেছে।
তবে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি চীনের গাড়ি যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, তাদের ব্যবসার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে খুব বেশি বিক্রি করে না, তবে তাদের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে, সরবরাহ শৃঙ্খলে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটলে, তা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীনের অনেক প্রস্তুতকারক কোম্পানি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়াতে মেক্সিকোতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (USMCA) কারণে তারা শুল্কের কিছু সুবিধা পায়।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে মেক্সিকো তাদের চীনা প্রস্তুতকারকদের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এমনটা হলে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের উপস্থিতি আরও বাড়াতে পারবে।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি হুন্দাই (Hyundai) এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দেশটির সরকার ‘সংযুক্ত গাড়ি’ (connected vehicle) সংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
এই বিধিনিষেধের কারণে চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করা কঠিন হতে পারে।
মোটকথা, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চাইছে, তেমনি এর ফলে চীনসহ অন্যান্য দেশের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের মধ্যে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, যা আমাদের দেশের বাণিজ্য এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা