যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্প: বাণিজ্য চুক্তি নাকি প্রযুক্তি, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আসল কারণ?
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগতি, বিশেষ করে অটোমেশন, শিল্পখাতে এক বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। একদিকে যেমন উৎপাদন বেড়েছে, তেমনই কমেছে শ্রমিকের চাহিদা।
উন্নত দেশগুলোতে, বিশেষ করে যেখানে একসময় গাড়ির কারখানাগুলো অর্থনীতির প্রাণ ছিল, সেখানে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পেছনে এই অটোমেশন একটি প্রধান কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্পের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যেমন নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা), আমেরিকান শ্রমিকদের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। তাঁর মতে, এই চুক্তিগুলো দেশের বাইরে, বিশেষ করে মেক্সিকোতে, কারখানা স্থানান্তরে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এই অভিযোগের পুরোটা সত্যি নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পেছনে বাণিজ্য চুক্তির চেয়েও বড় ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেসন মিলারের মতে, অটো শিল্পের আসল গল্পটা হলো অটোমেশন।
কারখানায় রোবটের ব্যবহার বাড়ায় গাড়ির অ্যাসেম্বলিতে (assembly) শ্রমিকদের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৮ সালে একটি গাড়ি তৈরি করতে যেখানে প্রায় ৫০ ঘণ্টা শ্রম লাগত, সেখানে অটোমেশন প্রযুক্তির কল্যাণে ২০০৫ সাল নাগাদ তা কমে দাঁড়িয়েছিল ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টায়।
এখানে বাণিজ্য চুক্তির একটি ভূমিকা ছিল, তবে তা গৌণ। নাফটা চুক্তির ফলে অনেক মার্কিন কোম্পানি মেক্সিকোতে তাদের কারখানা স্থাপন করে, যেখানে শ্রমের খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজারের পরিবর্তন। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমেরিকান গাড়ি প্রস্তুতকারক জেনারেল মোটরস, ফোর্ড এবং ক্রাইসলারের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল।
কিন্তু জাপানি এবং ইউরোপীয় গাড়ির আগমন তাদের বাজার হিস্যা কমিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও আমেরিকায় তাদের কারখানা তৈরি করেছে। যদিও এসব কারখানায় কর্মসংস্থান বেড়েছে, তবে সেখানে মজুরি তুলনামূলকভাবে কম এবং শ্রমিক সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন)-এর প্রভাবও কম।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে অটোমেশন বাড়ছে।
এর ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি কিছু শ্রমিকের চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই, শ্রমিকদের নতুন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর্মীদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এবং অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা করতে হলে, অটোমেশন এবং মুক্ত বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
তথ্য সূত্র: সিএনএন