ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান: ব্যয়ের পাহাড়, ফলাফলের অভাব
গত কয়েক সপ্তাহে, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তার খরচ দ্রুতই ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। তবে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এই বিপুল ব্যয়ের পরেও বিদ্রোহীদের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যায়নি।
গত ১৫ই মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জেএএসএসএম (JASSM) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, জিওপিএস-নির্ভর গ্লাইড বোমা (JSOW), এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া, দিয়েগো গার্সিয়া থেকে বি-২ বোমারু বিমানও হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই অতিরিক্ত একটি বিমানবাহী রণতরী, কয়েকটি যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক অভিযান নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরেও হুতি বিদ্রোহীদের উপর এর প্রভাব খুবই সীমিত। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টও এই অভিযানকে ভুল হিসেবে অভিহিত করেছেন বলে জানা যায়।
পেন্টাগন এখনো পর্যন্ত তাদের এই অভিযানের ফল সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হুতি বিদ্রোহীদের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে তারা হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের কিছু সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।
যদিও, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, হুতি বিদ্রোহীরা এখনো তাদের বাঙ্কারগুলি সুরক্ষিত রাখতে এবং ভূগর্ভে অস্ত্র মজুত করতে সক্ষম হচ্ছে।
অভিযান সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি বলেছেন, “আমরা কিছু সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করেছি, তবে এর ফলে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ভূপাতিত করার মতো ঘটনাগুলো বন্ধ করা যায়নি। একই সময়ে, আমরা আমাদের সামরিক সরঞ্জাম, যেমন গোলাবারুদ, জ্বালানি এবং কর্মীদের প্রস্তুত রাখার ক্ষমতা হারাচ্ছি।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানের কারণে হুতি বিদ্রোহীদের যোগাযোগ এবং হামলার ক্ষমতা কিছুটা হলেও কমেছে, তবে তারা এখনো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছে। যদিও, হুতিদের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
এই অভিযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর কৌশলগত প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, হুতিদের বিরুদ্ধে এত বিপুল পরিমাণ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ফলে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কারণ, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চীন সহ অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা এই উদ্বেগকে “অতিরঞ্জিত” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা প্রতিটি অভিযানে সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছি। মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনকৃত আমাদের বাহিনীর পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহারের অধিকার আমাদের আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী, আমরা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবো না।
বর্তমানে, হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান কত দিন চলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) এটিকে একটি “সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা” চলমান অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন