মার্কিন সিনেটে পালাবদলের সুর: মধ্যপন্থীরা কেন সরে দাঁড়াচ্ছেন?
ওয়াশিংটন, ডিসি – আমেরিকার রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর।
এর কারণ হিসেবে তাঁরা মূলত সিনেটের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজন এবং সমঝোতার পরিবেশ ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠাটাকেই দায়ী করছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে কি তবে মধ্যপন্থার জায়গাটি ধীরে ধীরে কমছে?
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সিনেটর গ্যারি পিটার্স সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। তাঁর এই ঘোষণার পরই যেন আরও কয়েকজন সিনেটর একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন মিনেসোটার টিনা স্মিথ এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের জেন শাহীন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তিনজনই সিনেটে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বিদলীয় সমঝোতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সিনেটরদের এই বিদায় এমন এক সময়ে আসছে, যখন ডেমোক্রেট দল আগামী নির্বাচনে তাদের হারানো ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনা সিনেটের কার্যকারিতা এবং ঐতিহ্যগত চরিত্রেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
একসময় সিনেটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ ছিল, কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক বিভাজন এতটাই বেড়েছে যে, সেই পরিস্থিতি আর নেই বললেই চলে।
রাজনৈতিক বিভাজন বেড়েছে, সেই সঙ্গে দলগুলোর মধ্যে চরমপন্থী মনোভাবও বাড়ছে। এখন অন্য দলের সঙ্গে কাজ করলে, অনেক সময় তাকে খারাপ চোখে দেখা হয়। এটা আমাদের জন্য খুবই খারাপ পরিস্থিতি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিবর্তনের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মেরুকরণ বৃদ্ধি পাওয়া। দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নিজ দলের সমর্থন ধরে রাখার প্রবণতাও এর জন্য দায়ী।
সিনেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া সিনেটরদের মতে, এই কাজটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁদের মতে, এখনকার সিনেটে সমঝোতা ও আপসের মানসিকতাকে দুর্বল হিসেবে দেখা হয়, যা তাঁদের জন্য হতাশাজনক।
অবশ্য, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় এখনো খোলা রয়েছে। মেইন অঙ্গরাজ্যের স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং মনে করেন, “আমরা মধ্যপন্থার জায়গাটি হারাচ্ছি। সমস্যা হলো, এখন এমন মানুষের বড় অভাব, যারা দুই পক্ষের কথাই শুনবেন এবং সমাধানের চেষ্টা করবেন।”
সাবেক ও বর্তমান সিনেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনেটের এই পরিবর্তনের পেছনে দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ একটি বড় কারণ। এই পরিস্থিতিতে, ডেমোক্রেটদের জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিনেটরদের এই বিদায় দলের জন্য একটি কঠিন সময় নিয়ে এসেছে। কারণ, ডেমোক্র্যাটরা বর্তমানে সংখ্যালঘিষ্ঠ অবস্থানে থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি—যেমন শুল্ক বৃদ্ধি, ব্যাপকহারে অভিবাসন বিতাড়ন, কর হ্রাস—ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
আমরা বুঝতে পারছি, এখনকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আমাদের এটা বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
আমি মনে করি, সরকারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার চেয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে দলের সমর্থন বাড়াতে হবে। ভার্জিনিয়ার সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার মনে করেন, মধ্য-পশ্চিম এবং গ্রেট প্লেইনস অঞ্চলে যদি ডেমোক্র্যাটরা ভালো করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পাওয়া কঠিন হবে।
সিনেটর পিটার্স মনে করেন, আগামী বছর ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি ভালো বছর অপেক্ষা করছে। কারণ, তিনি মনে করেন নতুন প্রেসিডেন্টের কারণে অনেক পরিবর্তন আসবে।
সিনেটরদের এই বিদায়ের পেছনে ব্যক্তিগত কারণও রয়েছে। এই কাজটি করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়। নিয়মিতভাবে বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয়, যা অনেক সময় তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
সিনেটর লিসা মারকাওস্কি মনে করেন, এখনও যারা সিনেটে আছেন, তাঁদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “আপনাকে দেখাতে হবে যে, কাজটি করা সম্ভব এবং এক্ষেত্রে সমালোচনার ভয় পেলে চলবে না।”
ডেমোক্র্যাটদের জন্য ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে অনেক সময় এর ফলস্বরূপ তাঁদের হতাশ হতে হয়।
আমি মনে করি, সিনেটে বর্তমানে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়েও মানুষকে জবাবদিহি করতে পারছেন না।”
সিনেটর ওয়ার্নার মনে করেন, মধ্যপন্থী সিনেটররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “যদি আমাদের মধ্যে আশা না থাকে, তাহলে পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক হবে।”
সিনেটর স্মিথ মনে করেন, তাঁর বিদায়ের পরেও ডেমোক্র্যাটরা এই আসনে জয়ী হয়ে ভালো কাজ করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন