ট্রাম্প বনাম রুজভেল্ট: আমেরিকার ইতিহাসের দুই মেরু।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের (এফডিআর) মধ্যে নীতি ও আদর্শগত পার্থক্য অনেক। ট্রাম্প যেখানে সরকারি কাঠামো দুর্বল করতে চাইছেন, সেখানে রুজভেল্ট ছিলেন এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের লক্ষ্য অনেকটা রুজভেল্টের তৈরি করা কাঠামোগুলোকে ভেঙে দেওয়া।
এই বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এরিক রচওয়ে-এর সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। রুজভেল্টের ওপর একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি।
তার মতে, ট্রাম্পের নীতিগুলি নিউ ডিল-এর সম্পূর্ণ বিপরীত। নিউ ডিল ছিল রুজভেল্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা আমেরিকার অর্থনীতিকে মহামন্দা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য নেওয়া হয়েছিল।
সরকারি বিভিন্ন নিয়ম-কানুন শিথিল করা, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো এবং সরকারি ব্যয়কে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করার মতো বিষয়গুলো ট্রাম্পের নীতিতে দেখা যায়।
অধ্যাপক রচওয়ের মতে, রুজভেল্ট কংগ্রেসের মাধ্যমে আইন পাস করে তার কাজগুলি করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে এমনটা দেখা যায়নি।
তিনি নির্বাহী ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। রুজভেল্ট শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সমর্থন লাভ করেছিলেন।
তার দল দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী জোট হিসেবে টিকে ছিল। তবে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা মূলত ব্যক্তি-নির্ভর ছিল।
আলোচনায় অধ্যাপক রচওয়ে আরও বলেন, রুজভেল্ট সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এখনো টিকে আছে, যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এইসব সংস্থার কার্যকারিতা কমাচ্ছেন। শুল্কের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প প্রশাসন রুজভেল্টের নীতির উল্টো পথে হেঁটেছে।
রুজভেল্ট প্রশাসন শুল্কের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি নির্বাহী ক্ষমতা তৈরি করেছিল, যা বাণিজ্য চুক্তি সহজ করতে সাহায্য করেছিল।
কিন্তু ট্রাম্প এই নীতি পরিবর্তন করেছেন।
ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন, মহামন্দা সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অধ্যাপক রচওয়ে বলেন, রুজভেল্টের সময়ে শুল্ক দ্বিগুণ করার ফল ভালো হয়নি।
তাই, ট্রাম্পের এই দাবি সঠিক নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রুজভেল্ট এবং ট্রাম্পের মধ্যে যোগাযোগের ধরন। রুজভেল্ট ‘ফায়ারসাইড চ্যাট’-এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতেন।
অধ্যাপক রচওয়ের মতে, রেডিও ছিল একটি সামাজিক মাধ্যম, যেখানে মানুষ একসঙ্গে বসে প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুনত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ভিন্ন, যা অনেকটা ব্যক্তিগত।
রুজভেল্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ট্রাম্পও বিচারকদের নিয়ে ভিন্ন পথে হেঁটেছেন।
অধ্যাপক রচওয়ের মতে, রুজভেল্ট একটি কাঠামো তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প সম্ভবত সেটিকে দুর্বল করতে চাইছেন।
রুজভেল্ট চারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। তবে পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টদের মেয়াদ সীমিত করা হয়।
অধ্যাপক রচওয়ে মনে করেন, রুজভেল্টের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তার এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাটা সমালোচিত হয়েছিল।
রুজভেল্ট তার প্রথম মেয়াদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন, যা পরবর্তী নির্বাচনে তার দলের জন্য সুবিধা বয়ে এনেছিল।
অধ্যাপক রচওয়ের মতে, রুজভেল্টের নীতির সাফল্যের কারণেই তার দল নির্বাচনে ভালো ফল করতে পেরেছিল।
অধ্যাপক রচওয়ের মতে, রুজভেল্টের সময়ে নেওয়া নীতিগুলির ফল ছিল সুস্পষ্ট। তিনি মনে করেন, ভালো নীতি তৈরি করতে পারলে, রাজনীতিও ভালো হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।