মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সম্প্রতি একটি বাজেট প্রস্তাবনা পাশ হয়েছে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য হলো বিশাল অংকের কর ছাড় দেওয়া, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ কমানো।
এই সিদ্ধান্তগুলো কিভাবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেট পরিকল্পনা মূলত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল। রিপাবলিকান দল নিয়ন্ত্রিত সিনেটে এটি অনুমোদন লাভ করে, যেখানে প্রস্তাব অনুযায়ী প্রায় সাত ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও, মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার এবং সরকারি বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে আসছেন।
তাদের প্রধান উদ্বেগের কারণগুলো হলো শুল্ক বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ বরাদ্দ হ্রাস, এবং ধনী ব্যক্তিদের জন্য কর সুবিধা বৃদ্ধি।
বাজেট বিতর্কের সময় শুল্কের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। ডেমোক্র্যাট নেতারা অভিযোগ করেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে অনেক সাধারণ পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।
তারা এমন কিছু দ্বীপের উদাহরণ দেন যেখানে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার উপর কোনো শুল্ক বসানো হয়নি।
ডেমোক্র্যাটদের মতে, রিপাবলিকানদের এই বাজেট প্রস্তাবনা দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর জন্য হুমকি স্বরূপ। তারা মেডিকেয়ার (Medicaid), সোশ্যাল সিকিউরিটি, খাদ্য সহায়তা এবং শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর বিরোধিতা করছেন।
তবে, কিছু রিপাবলিকান সিনেটরও এই প্রোগ্রামগুলো রক্ষার পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছেন।
বাজেট প্রস্তাবনায় কর ছাড়ের বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, এই কর ছাড়ের সুবিধা মূলত ধনী ব্যক্তিরাই বেশি পাবে।
যদিও শিশুদের জন্য করছাড়ের মতো কিছু বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবুও তাদের মূল আপত্তি হলো, এর ফলে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেট নিয়ে আলোচনা শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এর অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হতে পারে, যার মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত।
কারণ, মার্কিন অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেট প্রস্তাবনার একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো দেশটির ঋণ বৃদ্ধি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
এই পরিস্থিতিতে, বাজেট পরিকল্পনা গৃহীত হলে ঋণের বোঝা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বিতর্ক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা নিয়ে আসে। যেমন, একটি দেশের কর নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা আমাদের নীতি-নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা যায়, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
সংক্ষেপে, মার্কিন সিনেটের বাজেট বিতর্ক একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ এবং উদ্বেগের প্রতিফলন ঘটায়। এই বিতর্কের ফলাফল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস