যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য কী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নই বা কী চাইছে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
মূলত, এই বাণিজ্য বিরোধের কারণ হলো বাণিজ্য ঘাটতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের থেকে বেশি পণ্য কেনে, যা তাদের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়াচ্ছে।
গত বছর, শুধু পণ্যের ক্ষেত্রেই এই ঘাটতি ছিল প্রায় ১৭৮ বিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ লাখ কোটি টাকা)। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ডিজিটাল পরিষেবা, যেমন অনলাইন বিজ্ঞাপন ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বেশি বিক্রি করে।
ফলে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি ৪৮ বিলিয়ন ইউরোতে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা) নেমে আসে, যা মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩ শতাংশ। ইইউ-এর মতে, বাণিজ্য তাই ‘ভারসাম্যপূর্ণ’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের কাছ থেকে আরও বেশি পণ্য কিনুক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)।
এর জন্য ইইউ-কে সম্ভবত রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস ও এলএনজি-র আমদানি বন্ধ করতে হবে। ইইউ ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও চাইছে, ইউরোপ তাদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াক এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সামগ্রী কিনুক। কিন্তু এমনটা হলে ইউরোপীয় ভোটাররা চাইবেন তাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোকেই যেন এই কাজ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রেও দুই পক্ষের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশি গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র চায় এই শুল্ক কমানো হোক।
খাদ্য ও কৃষি পণ্যের মান নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু নিয়মের সমালোচনা করে আসছে।
এর মধ্যে হরমোন ব্যবহার করে উৎপাদিত গরুর মাংস এবং ক্লোরিন মেশানো মুরগি অন্যতম। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভ্যালু-অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই কর তাদের কোম্পানিগুলোর জন্য বোঝা স্বরূপ।
তবে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভ্যাট বাণিজ্য নিরপেক্ষ, কারণ এটি আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চললেও, শুল্ক আরোপের সময়সীমা কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।
মূল সমস্যাগুলো—খাদ্য নিরাপত্তা মান, ভ্যাট এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ—সহজেই সমাধানযোগ্য নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হলে তা উভয় পক্ষের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এই পরিস্থিতিতে, বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও কঠিন করে তুলছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস