মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। শুক্রবারের এক ঘোষণায় ট্রাম্প ইইউ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, যা বিশ্ব বাণিজ্য অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
তবে কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ’র সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার ধীরগতি নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ দেখা দেয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা ইইউ কর্মকর্তাদের কাছে আলোচনা দ্রুত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। যদিও আলোচনা দ্রুত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
তবে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন ট্রাম্প। এর ফলস্বরূপ, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানান, আগামী ১ জুন, ২০২৫ থেকে ইইউ-এর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এরপর বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে জানান, ট্রাম্প সম্ভবত ইইউ-এর প্রস্তাবগুলোর গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং তিনি চেয়েছিলেন এর মাধ্যমে ইইউ-কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে।
ইইউ-এর পক্ষ থেকে দ্রুত আলোচনার জন্য বৈঠকের প্রস্তাব আসে এবং পরবর্তীতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে আগ্রহী। ইইউ’র এই প্রতিক্রিয়ার পর, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মূল কারণ হলো ইইউ-এর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থ এবং চাহিদার সমন্বয় করা কঠিন। বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা।
ট্রাম্প অবশ্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, যা এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্কের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। এর ফলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও এর সম্ভাব্য প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন