শিরোনাম: জীবন বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার: জিন সম্পাদনার মাধ্যমে ক্যান্সার জয়, ৩ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার জয়
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী এক আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ৩২ কোটি টাকার সমান) ‘ব্রেকthrough প্রাইজ’ জিতলেন ডেভিড লিউ নামের এক বিজ্ঞানী। ম্যাসাচুসেটস-এর ব্রড ইনস্টিটিউট অফ এমআইটি এবং হার্ভার্ডের অধ্যাপক ডেভিড লিউ, জিন সম্পাদনার অত্যাধুনিক কৌশল আবিষ্কার করেছেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন আশা জাগিয়েছে।
লিউয়ের মূল উদ্ভাবন হল ‘বেজ এডিটিং’ এবং ‘প্রাইম এডিটিং’ নামক দুটি অতি-সূক্ষ্ম জিন সম্পাদনা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ জিনকে সঠিক করা সম্ভব, যা আগেকার প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্ভব ছিল না।
লিউয়ের এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
এই আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল, যুক্তরাজ্যের এক কিশোরীর জীবন বাঁচানো। ১৩ বছর বয়সী অ্যালিসা ট্যাপলি নামের ওই কিশোরী, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল।
প্রচলিত কেমোথেরাপি এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনেও যখন কোনো কাজ হয়নি, তখন ‘বেজ এডিটিং’-এর মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসা সফল হওয়ার পর, বর্তমানে অ্যালিসা সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছে।
ডেভিড লিউয়ের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছরের গবেষণা ও একাগ্রতা। ছোটবেলায় প্রকৃতির কাছাকাছি বেড়ে ওঠা লিউয়ের বিজ্ঞানমনস্কতার জন্ম হয়, যা পরবর্তীতে তাকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে।
সেখানে তিনি প্রখ্যাত রসায়নবিদ ই. জে. কোরির অধীনে গবেষণা করেন। শুধু বিজ্ঞানচর্চাই নয়, বিভিন্ন সময়ে তার ব্যতিক্রমী কিছু শখও ছিল। কার্ড গণনা থেকে শুরু করে ভিডিও গেম তৈরি—বিভিন্ন ধরণের কাজে তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।
তবে, ডেভিড লিউ শুধু একজন বিজ্ঞানীই নন, তিনি একজন মানবদরদীও। তিনি তার গবেষণাগারের কর্মীদের জন্য প্রতি বছর নিজের বেতনের একটা অংশ দান করেন। এমনকি কর্মীদের সাইকেল কেনার সামর্থ্য নেই জেনে, তিনি তাদের জন্য সরাসরি অর্থ সাহায্যও করেছিলেন।
জিন সম্পাদনার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিরাট পরিবর্তন আনবে। তবে, এই ধরনের চিকিৎসার খরচ এখনো অনেক বেশি।
লিউ মনে করেন, বিজ্ঞানীদের এই বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে, যাতে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষও এই চিকিৎসার সুবিধা পায়। একইসঙ্গে, গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করাটাও জরুরি।
বর্তমানে বিশ্বে বেজ এডিটিং এবং প্রাইম এডিটিং পদ্ধতির মাধ্যমে আরও অনেক রোগের চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। এই গবেষণাগুলোর সফলতার ওপর নির্ভর করছে, ভবিষ্যতে মানুষের জীবন কতটা সহজ হবে।
ডেভিড লিউয়ের এই আবিষ্কার বিজ্ঞান ও মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: The Guardian