আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং মার্কিন শুল্কের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। সোমবার এই অঞ্চলের শেয়ারবাজারগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে, যা সেখানকার অর্থনীতি এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপির।
গত কয়েকদিনে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৬৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগেও তেলের দাম ছিল ৯০ ডলারের বেশি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যারা তেল উৎপাদন করে, তাদের জন্য এই দাম অনেক কম। এর সাথে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি।
এর ফলে বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোতে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। ইরাকের মতো কিছু দেশে এই শুল্কের পরিমাণ আরও বেশি, যা তাদের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
শেয়ার বাজারের এই পতনের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দাম কমা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। দুবাইয়ের শেয়ারবাজারে সোমবার ৬ শতাংশ দরপতন হয়েছে।
সেখানকার সবচেয়ে বড় কোম্পানি ইমার প্রপার্টিজের শেয়ারের দাম কমেছে ৯ শতাংশ। এছাড়া, আবু ধাবি এবং সৌদি আরবের শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
সৌদি আরবের প্রধান তেল কোম্পানি আরামকো-র শেয়ারের দাম কমেছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে, ওপেক প্লাস (OPEC+) দেশগুলো, যাদের মধ্যে আলজেরিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কুয়েত, ওমান, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে, তারা বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়াতে রাজি হয়েছে।
সাধারণত, ওপেক প্লাস তাদের উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ায়, কিন্তু এবার তারা দ্রুত তেল সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের উৎপাদন বাড়লেও বাজারের এই অস্থিরতা সহজে কাটবে না।
পাকিস্তানের শেয়ার বাজারেও সোমবার দরপতন হয়েছে। দেশটির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে তাদের বস্ত্রশিল্পের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।
পাকিস্তান সরকার বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে বলে জানা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক এই অঞ্চলে কাজ করেন এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তেলের দাম কমে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, যা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের পরিবর্তন বাংলাদেশের আমদানি খরচকে প্রভাবিত করে, যা আমাদের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক বাজারে এই অস্থিরতা চলতে থাকলে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও সতর্ক থাকতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
তথ্য সূত্র: এপি