বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের আঁচ: শুল্কের কোপে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশের জন্য কী সম্ভাবনা?
আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা:
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণার পর বিশ্ব শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, তাঁর বাণিজ্য নীতির কারণে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে দর পতন হয়েছে। টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ৬ শতাংশের বেশি বাড়লেও, অস্থিরতা এখনো কাটেনি।
শুল্ক বৃদ্ধি ও বাজারের প্রতিক্রিয়া:
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরও ৫০ শতাংশ বাড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির ড্যাক্স সূচক সামান্য বেড়েছে, প্যারিসের সিএসি ৪০ এবং ব্রিটেনের এফটিএসই ১০০ সূচকেও সামান্য উন্নতি হয়েছে।
তবে, হংকংয়ের শেয়ার বাজার সোমবারের বড় পতনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি।
এশিয়ার বাজারে চিত্র:
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৬ শতাংশের বেশি বেড়ে ৩১,০০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। হংকংয়ের শেয়ার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও, সেখানকার হ্যাং সেং ইনডেক্স এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে।
চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচকও বেড়েছে, কারণ দেশটির সরকার শেয়ার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজারেও সূচক বেড়েছে।
তবে, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বাজার ছুটির পর পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।
অন্যান্য বাজারের অবস্থা:
তাইওয়ানের বাজারেও মন্দা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসির শেয়ারের দাম কমেছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের এসএন্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য কমেছে, এবং ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজও নিম্নমুখী ছিল।
বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। বাণিজ্য শুল্কের কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তেল, মুদ্রা ও সোনার বাজারে প্রভাব:
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে তেলের চাহিদাও কমতে পারে। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম কমে ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে অবশ্য দাম কিছুটা বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর কমেছে, এবং ইউরোর দরও কমেছে।
সোনার দাম কিছুটা বেড়েছে, যেখানে বিটকয়েনের দামেও উত্থান দেখা গেছে।
বাংলাদেশের জন্য প্রভাব:
বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাজারে শুল্ক বাড়লে দেশের তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশের পরিবহন খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়তে পারে।
আবার, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি তাদের উৎপাদন কেন্দ্রগুলো চীন থেকে সরিয়ে নিতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
উপসংহার:
বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি তৈরি করতে হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস