ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি প্রায়শই বড় কর্পোরেট বিনিয়োগকে তাঁর অর্থনৈতিক এজেন্ডা সফল হওয়ার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু এই নীতির অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের জন্য এক গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে আগামী দশ মাস বা এমনকি দশ দিনের জন্য পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা কর্মী নিয়োগ স্থগিত করতে পারেন বা কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো পদক্ষেপ নিতে পারেন।
শুল্কের ভয়ে কিছু কোম্পানি হয়তো কারখানা স্থাপন করতে চাইবে, আবার অনেকে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেমস বুলার্ড সতর্ক করেছেন, ১৯৩০ সালের ‘স্মুট-হলি আইন’-এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সময়ে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা দেখা গিয়েছিল।
বুলার্ডের মতে, “যখন কেউ জানে না নিয়ম কী হবে, তখন সেখানে বিনিয়োগ করতে কার ভালো লাগবে?”
অর্থনীতিবিদ মেরি লাভলি বলেছেন, শুল্ক কত দিন বহাল থাকবে, তা না জানার কারণে কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁর মতে, “এই অনিশ্চয়তা আগে কখনো দেখা যায়নি।”
এমনকি ট্রাম্পের কিছু সমর্থকও বলছেন যে, এই বিশৃঙ্খলা বিনিয়োগের ক্ষতি করছে।
বিলিয়নেয়ার ও ট্রাম্পের সমর্থক বিল অ্যাকম্যান সতর্ক করেছেন, শুল্ক আরোপ অব্যাহত থাকলে “ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।” যদিও তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সুযোগ নিয়েছে এবং তাদের ভুল বাণিজ্য নীতির কারণে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তিনি একটি সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অ্যাকম্যানের মতে, “একই সঙ্গে বন্ধু এবং শত্রু দেশগুলোর ওপর বিশাল ও অসম শুল্ক আরোপের মাধ্যমে, আমরা একটি দেশের বাণিজ্য সহযোগী, ব্যবসার স্থান এবং মূলধন বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে আত্মবিশ্বাসের প্রতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালাচ্ছি।”
শুল্কের হুমকি ব্যবসায়ীদের জন্য পরিকল্পনা করা প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক শূন্য শতাংশ হবে নাকি ৫০ শতাংশ, তা তারা জানে না।
অন্য দেশগুলো পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে তাদের পণ্যের চাহিদা কেমন হবে, সে সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই।
বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত।
বাজারের এই দরপতন অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
অ্যাকম্যানের মতে, “যখন বাজার ধসে পড়ে, তখন নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়, ভোক্তারা খরচ করা বন্ধ করে দেয় এবং ব্যবসাগুলো বিনিয়োগ কমানো ও কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়।”
মেরি লাভলি বলেছেন, “আগামীকাল ডলারের মূল্য কত হবে, তা বলা কঠিন, ১০ সপ্তাহ পরের কথা তো বাদই দিলাম।”
এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য কত টাকা এবং কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে, তা পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ অনেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোকে সম্ভাব্য মন্দা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। এমনকি ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক তেল শিল্পও তাঁর নীতির অস্থিরতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধের এই অস্থিতিশীলতা কাঁচামাল বাজারে বিপর্যয় ডেকে আনছে। তারা আরো স্থিতিশীলতা চাইছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন