মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন বিরোধী মনোভাবের কারণে ইতিমধ্যে অনুমোদন অপেক্ষমান কিছু নতুন ভ্যাকসিনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ফেডারেল ও রাজ্য সরকারে টিকা বিরোধী মনোভাবের কারণে এই ভ্যাকসিনগুলোর অনুমোদন পেতে দেরি হতে পারে, অথবা নাও হতে পারে।
সম্প্রতি, খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) নভোভ্যাক্স কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করেছে। যদিও এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। তারা মনে করছেন, সম্ভবত এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে আরও কিছু তথ্য চাইছে এফডিএ। উল্লেখ্য, ২০২২ সাল থেকে জরুরি ব্যবহারের জন্য এই ভ্যাকসিনটি পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, মডার্নার পরবর্তী প্রজন্মের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এমআরএনএ-১২৮৩-এর অনুমোদন আগামী ৩১ মের মধ্যে দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া, কোম্পানিটি তাদের ফ্লু+কোভিড-১৯ সমন্বিত ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে।
অনুমোদন পেলে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ফ্লু এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য একটি একক শট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সমন্বিত ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা টিকাদানকে আরও সহজ করতে পারে। শীতকালে সাধারণত ফ্লু এবং কোভিড-১৯ উভয় রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
এই সময়ে উভয় রোগের প্রতিষেধক একইসঙ্গে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। মডার্না তাদের ফ্লু, কোভিড-১৯ এবং নতুন সমন্বিত ভ্যাকসিন—এই তিনটিই সহজলভ্য করতে চায়।
ইতিমধ্যে, সমন্বিত ভ্যাকসিনগুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। জুন মাসে মডার্না জানায়, তাদের তৈরি ফ্লু+কোভিড-১৯ সমন্বিত ভ্যাকসিন এমআরএনএ-১০৮৩ বয়স্কদের মধ্যে ফ্লু এবং করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলোর চেয়ে বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে।
এই একই ধরনের সমন্বিত ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে ফাইজার ও বায়োএনটেকও। তারা এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ফ্লু ও কোভিড-১৯ সমন্বিত ভ্যাকসিন তৈরি করছে। নভোভ্যাক্সও তাদের ফ্লু ও কোভিড-১৯ সমন্বিত ভ্যাকসিনের গবেষণা ও উন্নয়ন চালিয়ে যেতে চাইছে।
কিন্তু নতুন ও উন্নত এই ভ্যাকসিনগুলোও নভোভ্যাক্সের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের মতো একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এমআরএনএ প্রযুক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সমালোচনা বাড়ছে। নভোভ্যাক্সের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন যেখানে প্রোটিন-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেখানে মডার্নার এমআরএনএ-১২৮৩ এবং মডার্না ও ফাইজার/বায়োএনটেকের তৈরি ফ্লু+কোভিড-১৯ সমন্বিত ভ্যাকসিনগুলোতে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এমআরএনএ প্রযুক্তি কোষকে নির্দেশনা দেয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভ্যাকসিন-বিরোধী মনোভাবের কারণে মানুষ হয়তো ফ্লু+কোভিড ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য ভ্যাকসিন থেকেও বঞ্চিত হতে পারে।
কিছু রাজ্যে, যেমন—মন্টানা, আইওয়া, ইডাহো এবং টেক্সাস-এ এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিষিদ্ধ করার জন্য বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ফেডারেল পর্যায়েও ট্রাম্প প্রশাসন এমআরএনএ গবেষণা ও প্রযুক্তি মূল্যায়ন করতে চাইছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমআরএনএ প্রযুক্তির সুবিধাগুলো সম্পর্কে জনগণকে আরও বেশি করে জানাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, সমন্বিত ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা টিকাদান কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করতে পারে। কারণ, এতে একটি ইনজেকশনের মাধ্যমেই দুটি রোগের প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হবে।
ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমআরএনএ প্রযুক্তি ফ্লু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন