যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি: বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা, উদ্বিগ্ন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে। তাঁর সরকার বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শুল্কনীতিকে সমর্থন করে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো একে দীর্ঘদিনের “ভুল” বাণিজ্য ব্যবস্থার “পুনর্গঠন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, বাণিজ্য ঘাটতি এবং বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর গত কয়েকদিনে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন শেয়ার বাজারের অন্যতম সূচক এসএন্ডপি ৫০০-এর প্রায় ১১ শতাংশ পতন হয়েছে, যা দেশটির বাজারে ৫.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি লোকসান ঘটিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারী মাসের ১৯ তারিখের সর্বোচ্চ স্তর থেকে হিসাব করলে, এসএন্ডপি ৫০০-এর পতন হয়েছে ১৭.৬ শতাংশ। প্রযুক্তি-নির্ভর নাসডাক কম্পোজিট ইনডেক্সও ইতোমধ্যে “bear market”-এ প্রবেশ করেছে, যেখানে তাদের শেয়ারের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তর থেকে ২২.৬ শতাংশ কমেছে।
তবে, এই পরিস্থিতিতেও নাভারো মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি আমেরিকার জন্য জরুরি ছিল। তাঁর মতে, এই নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, বহু বছর ধরে আমেরিকা অন্যান্য দেশের সঙ্গে অসম বাণিজ্য চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। সেই কারণে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক বসায়, তাদের তুলনায় অনেক বেশি শুল্ক দিতে হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, শুধু পণ্য বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩০,০০০ কোটি টাকা), যা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। যদিও পরিষেবা খাতে দেশটির উদ্বৃত্ত ছিল ২৯৫ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা চলছে। ইইউ মনে করে, একটি শক্তিশালী ও সংস্কারকৃত বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপর নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে, বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের নীতি বিশ্ব বাণিজ্যের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন