মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে: শুল্কের প্রভাব ও বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে সেখানকার বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। এই শুল্কগুলি মূলত আমদানি করা খাদ্য এবং খাদ্য সামগ্রীর উপাদানগুলির উপর আরোপ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি অর্থ খরচ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামুদ্রিক খাবার, কফি, ফল, পনির, বাদাম, ক্যান্ডি বার এবং অন্যান্য আমদানি করা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। এছাড়াও, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের মোড়কের মতো উপকরণগুলির দামও বাড়বে, যা অন্য দেশ থেকে আসে।
শুরুতে পচনশীল খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে এবং পরে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে দেখা যাবে। কিছু ক্ষেত্রে, কোম্পানিগুলি শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের আকার ছোট করতে পারে বা কিছু পণ্য বাজার থেকে তুলে নিতে পারে।
খুচরা বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করবে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা আরও স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির বাজেট ল্যাবের অনুমান অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম সামগ্রিকভাবে প্রায় ২.৮ শতাংশ বাড়তে পারে, যেখানে তাজা ফল ও সবজির দাম প্রায় ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এই মূল্যবৃদ্ধি বিশেষভাবে কম আয়ের মানুষের উপর প্রভাব ফেলবে, কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য ব্যয় করতে হয়।
ছোট কোম্পানিগুলো এই পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বড় সুপারমার্কেট চেইনগুলির তুলনায় ছোট মুদি দোকানগুলি সম্ভবত দাম বাড়াতে বেশি তৎপর হবে, কারণ তাদের পক্ষে এই বাড়তি খরচ বহন করা কঠিন।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ইতালীয় জলপাই তেল ও ভিনেগার সরবরাহকারী একটি কোম্পানি জানিয়েছে যে, তারা আগামী মাস থেকে তাদের পণ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে একটি জটিল বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলও কাজ করে। অনেক খাদ্যদ্রব্য, যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব নয়, সেগুলোর দাম সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ আমদানি করে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ সামুদ্রিক খাবার ও কফি, ৫৯ শতাংশ ফল এবং ৩৫ শতাংশ সবজি আমদানি করা হয়।
তবে, মেক্সিকো ও কানাডার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৃষি সরবরাহকারীদের শুল্কের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি সম্ভবত খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও বাধা দেবে।
ইতিমধ্যেই, ভোক্তারা ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যের কারণে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছেন। অনেক দোকানে ক্রেতারা এখন আগের চেয়ে কম পরিমাণে কেনাকাটা করছেন এবং সস্তা ব্র্যান্ডের পণ্যগুলির দিকে ঝুঁকছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতির আন্তঃসংযোগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিগুলি কীভাবে ভোক্তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে, তা স্পষ্ট হয়। খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন