যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ক্ষমতা ত্যাগের পর প্রথম এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিকে আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম ‘মানব সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে ‘এমার্জ গালা’ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে হ্যারিস ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠানে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগানো হয়।
ভাষণে হ্যারিস সরাসরি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রমের সমালোচনা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদর্শ সমুন্নত রাখার পরিবর্তে আমরা দেখছি সেই আদর্শগুলোর প্রতি চরম অবহেলা।’ তিনি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতার জন্য তাকে দায়ী করেন এবং এটিকে ‘বিবেচনাহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তার মতে, এই শুল্ক শ্রমিক ও পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কারণ এটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াবে। এছাড়াও, এর ফলে মানুষের সঞ্চয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আমেরিকান ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হ্যারিস মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি একটি আসন্ন মন্দার কারণ হতে পারে। তবে ট্রাম্পের দাবি, এই শুল্কের মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতি বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
হ্যারিস তার ভাষণে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি বৃহত্তর রক্ষণশীল প্রকল্পের ‘বাহক’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ডেমোক্র্যাটদের সতর্ক করে বলেন, সবকিছুকে বিশৃঙ্খল মনে করার পরিবর্তে তাদের একটি সুসংগঠিত এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বুঝতে হবে। তিনি ডেমোক্রেটদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হ্যারিসের এই ভাষণটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর হ্যারিস ও তার দল পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন অথবা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পদে লড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
হ্যারিস তার ভাষণে বিভিন্ন ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতার নাম উল্লেখ করেন, যারা এই মুহূর্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করছেন। এদের মধ্যে সিনেটর কোরি বুকার, ক্রিস ভ্যান হোলেন, ক্রিস মারফি, জ্যাসমিন ক্রকেট, ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট, অ্যালেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ এবং বার্নি স্যান্ডার্সের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হ্যারিস বলেন, ‘আমি এখানে সবকিছুর সমাধান দিতে আসিনি, তবে আমি বলতে এসেছি, আপনারা একা নন এবং আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’
এদিকে, হ্যারিসের এই ভাষণ প্রচারের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার তিনি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রে খবর, হ্যারিসের এই বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি প্রচেষ্টা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন