যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই শুল্কগুলি একদিকে যেমন বাজারের অস্থিরতা তৈরি করেছে, তেমনই বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এর ফলে, বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল থেকে এই শুল্কগুলি কার্যকর হয়েছে, যার প্রাথমিক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক নীতির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে তামার মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ, কাঠ, ঔষধ এবং সেমিকন্ডাক্টর (Semiconductor) বা অর্ধপরিবাহী উপাদানের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। এই উপকরণগুলোর দাম বাড়লে, মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে চিকিৎসা সরঞ্জাম—এমনকি গাড়ির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়বে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। কারণ, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিলে বিশ্ব বাণিজ্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে। বর্তমানে, উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দিলে, বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি সেমিকন্ডাক্টরের দাম বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের দামও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের প্রস্তুতকারকদের জন্য পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
তারা বলছেন, পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকে আরও কঠিন করে তুলবে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা।
একইসঙ্গে, স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে, যাতে বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন