টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে নতুন কিছু ওষুধ, বাড়ছে ঝুঁকি?
বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিসের প্রকোপ। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় তা গুরুতর আকার ধারণ করে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ইনসুলিন একটি অপরিহার্য বিষয়।
কিন্তু সম্প্রতি, এই রোগীদের চিকিৎসায় নতুন ধরনের কিছু ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ওষুধগুলো হলো— ওজনপিক, উইগোভি এবং জেপবাউন্ড-এর মতো জিএলপি-১ রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এই ওষুধগুলো টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওষুধগুলোর ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মূলত, জিএলপি-১ ওষুধগুলো তৈরি করা হয়েছে তাদের জন্য, যাদের শরীর ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে (টাইপ ২ ডায়াবেটিস)। ওজন কমানো, ঘুমের সমস্যা কমানো এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর মতো কিছু ক্ষেত্রেও এই ওষুধগুলো উপকারী।
তবে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই ওষুধগুলোর প্রভাব এখনো ভালোভাবে জানা যায়নি। কারণ, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এই রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালাতে ঝুঁকি নিতে চায়নি। তাদের আশঙ্কা ছিল, ইনসুলিনের সঙ্গে এই ওষুধগুলো ব্যবহারের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), যা জীবনহানির কারণ হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ওজনপিক এবং মাউন্জারো-এর মতো ওষুধগুলোর প্যাকেজের গায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে এগুলো টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য নয়। কিন্তু অনেক চিকিৎসক, বিশেষ করে যারা একইসঙ্গে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও স্থূলতায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করেন, তারা অফ-লেবেল (যেসব ব্যবহারের জন্য ওষুধটি তৈরি হয়নি) পদ্ধতিতে এই ওষুধগুলো প্রেসক্রাইব করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণায় দেখেছেন, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই ওষুধগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতার হারও বেড়েছে, বিশেষ করে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে।
স্থূলতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, ২০০৮ সালে যেখানে মাত্র ৪ শতাংশ জিএলপি-১ ওষুধ ব্যবহার করতেন, সেখানে ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু রোগীর জন্য এই ওষুধগুলো উপকারী হতে পারে। কারণ, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সহায়ক। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন কমানো বেশ কঠিন।
এই ওষুধগুলো এক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করতে পারে।
তবে, চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, এই ওষুধগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যেমন— বমি বমি ভাব, পেট খারাপ ইত্যাদি। এছাড়াও, রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই।
তাই, এই ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
বর্তমানে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের ওপর জিএলপি-১ ওষুধগুলোর প্রভাব নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা চলছে। এর মধ্যে একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ড. ভাইরাল শাহ।
তার গবেষণায় জানা গেছে, যারা ইনসুলিনের পাশাপাশি এই ওষুধগুলো ব্যবহার করছেন, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়েছে। তবে, এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ, যার সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য নতুন ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সতর্কতার প্রয়োজন।
এছাড়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন