যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর গবেষণা খাতে তহবিল হ্রাস নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য গবেষণা এবং উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা খাতে এনআইএইচ-এর বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের ওপর, বিশেষ করে যেগুলোতে জনস্বাস্থ্য, রোগের বিস্তার, এবং চিকিৎসা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
এই তহবিল হ্রাসের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এইচআইভি/এইডস, ভ্যাকসিন গবেষণা, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পগুলো। জানা গেছে, এনআইএইচ-এর এই সিদ্ধান্তের কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, অথবা তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এর ফলে, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনআইএইচ-এর এই পদক্ষেপের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতি। ট্রাম্প প্রশাসন বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, এবং এর ফলস্বরূপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প বাতিল করা হয়।
এছাড়াও, ভ্যাকসিন বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সক্রিয়তা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার প্রভাবেও এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা প্রকল্প, যা তরুণ প্রজন্মের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিল, তা এই তহবিল হ্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসাথে, ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রেও অর্থ বরাদ্দ কমানো হয়েছে, যা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং রোগের বিস্তার রোধের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে। কারণ, এনআইএইচ হলো বিশ্বের বৃহত্তম বায়োমেডিকেল গবেষণা তহবিল সরবরাহকারী সংস্থা। তাদের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাগুলো শুধু আমেরিকার জন্যই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রোগের বিস্তার রোধ, নতুন চিকিৎসার উদ্ভাবন, এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলোর ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে দেখব, আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম কমে আসলে, উন্নয়নশীল দেশগুলো নতুন প্রযুক্তি এবং চিকিৎসার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
তাই, উন্নত দেশগুলোর এই ধরনের সিদ্ধান্ত, উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিজ্ঞান ও গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ কমানোর ফলস্বরূপ, স্বাস্থ্য বিষয়ক অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। রোগের বিস্তার রোধ, নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার, এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
তাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) উচিত, গবেষণা খাতে অর্থায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং উন্নত দেশগুলোকে এই বিষয়ে তাদের নীতি পর্যালোচনা করার জন্য উৎসাহিত করা।
তথ্য সূত্র: CNN